আমেরিকায় তৃতীয় বিশ্বের অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ, ঘোষণা ট্রাম্পের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: হোয়াইট হাউসের কাছে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের ওপর এক আফগান নাগরিকের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরপরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে এক যুগান্তকারী ঘোষণা করলেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘সমস্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। ট্রাম্পের দাবি, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থাকে ‘সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার’ করবে।
‘বাইডেন আমলের সব অবৈধ অনুমোদন বাতিল’—ট্রাম্প
ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দুর্বল অভিবাসন নীতি’ দেশের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার মান ক্ষুণ্ণ করেছে। তাঁর কথায়, ‘যারা আমেরিকাকে ভালোবাসতে অক্ষম, তাদের আর এখানে থাকার অধিকার নেই।’
তিনি আরও ঘোষণা করেন, মার্কিন নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদের সব ধরনের ফেডারেল সুবিধা ও ভর্তুকি বন্ধ করা হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি নষ্ট করলে অভিবাসীদের নাগরিকত্বও বাতিল হতে পারে।
যেকোনও বিদেশী নাগরিককে যদি মার্কিন নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বা পশ্চিমি সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়, তাকে নির্বাসিত করা হবে। ট্রাম্পের কড়া মন্তব্য, ‘যারা ঘৃণা করে, চুরি করে, হত্যা করে এবং আমেরিকার আদর্শকে ধ্বংস করে—তারা এখানে বেশিদিন থাকবে না।’
আফগান নাগরিকের হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ’: ট্রাম্প
সম্প্রতি এক আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন, হোয়াইট হাউসের কাছে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের ওপর গুলি চালান। এই ঘটনার পরই অভিবাসন নীতিতে কড়া অবস্থানে আমেরিকা। ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইতিমধ্যেই ১৯টি দেশের অভিবাসনে বাড়তি নজরদারি
এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে ট্রাম্প প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছিল, ঝুঁকিপূর্ণ ও উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত ১৯টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের গ্রিনকার্ড কঠোরভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
এই তালিকায় রয়েছে—আফগানিস্তান, মায়ানমার, চাদ, কঙ্গো, ইরিত্রিয়া, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন, লাওস, কিউবা, ভেনেজুয়েলা-সহ আরও কয়েকটি দেশ।
‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ আসলে কারা?
‘তৃতীয় বিশ্ব’ এর দেশ বলতে বর্তমানে দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনুন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলিকেই বোঝায়। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) তালিকায় ৪৪টি দেশ রয়েছে, যার মধ্যে আফ্রিকার ৩২টি, এশিয়ার ৮টি (আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার সহ), ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের একটি (হাইতি) এবং প্রশান্ত মহাসাগরের তিনটি (সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, কিরিবাতি এবং টুভালু) রয়েছে।
এশিয়া: আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাও পিপল’স ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (লাওস), মায়ানমার, নেপাল, পূর্ব তিমুর এবং ইয়েমেন।
ক্যারিবিয়ান: হাইতি
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল: কিরিবাতি, সলোমন ও টুভ্যালু
ট্রাম্প কোন কোন দেশকে লক্ষ্য করে অভিবাসন নিষেধাজ্ঞা আনতে চান—তা সরাসরি উল্লেখ না করলেও তাঁর ইঙ্গিত UNLDC তালিকায় থাকা দেশগুলিই মূল টার্গেট। বর্তমানে, উন্নয়নশীল দেশ এবং ‘নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রেই তৃতীয় বিশ্বের দেশ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর এর প্রভাব পড়বে।
ফলে চাকরি ও শিক্ষা সংক্রান্ত ভিসা, শরণার্থী সুরক্ষা, বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক কড়াকড়ি দেখা দিতে পারে।
ভারত কী এই তালিকায় আছে?
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, শীতল যুদ্ধের শ্রেণীবিভাগ অনুসারে, ভারত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির মধ্যে ছিল। সুতরাং, ঐতিহাসিকভাবে, এটি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে পারে।
তবে, আধুনিক ব্যাখ্যায়, ভারতকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি, সম্প্রতি জাপানকে ছাড়িয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ভারত এলডিসি তালিকায় নেই। India Today


