Thursday, November 27, 2025
Latestরাজ্য​

Barasat : চোখ ‘চুরির’ ঘটনা ধামাচাপা দিতেই কী তড়িঘড়ি চাকরি দেওয়া হলো?

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বারাসত সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতদেহ থেকে বাঁ চোখ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা হাসপাতাল চত্বরে। মৃত যুবক প্রীতম ঘোষের দেহ গ্রহণ করতে গিয়ে তাঁর পরিবার লক্ষ্য করেন, বাঁ চোখটি নেই। এরপরই শুরু হয় ব্যাপক উত্তেজনা ও ক্ষোভ।

পরিবারের অভিযোগ ও ক্ষোভ

প্রীতম ঘোষের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ময়নাতদন্তের পর দেহ দিতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইঁদুরের উৎপাতের যুক্তি দেখায়। পরিবারের দাবি, ঘটনা ধামাচাপা দিতেই মৃতদেহের চোখে তুলসী পাতা চাপা দেওয়া হয়েছিল।

মৃত যুবকের স্ত্রী কেয়া ঘোষ দাস কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “ইঁদুর চোখ খুবলে নিলে দাগ থাকত। এখানে যেভাবে সরানো হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে।”

মাত্র ১৮ দিন আগে সিজারে সন্তানের জন্ম হয়েছে। স্বামীর মৃত্যু এবং তারপর এমন ঘটনা—স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়েছেন তিনি।

মর্গের কর্মীদের বিস্ফোরক দাবি

মর্গের কর্মীদের বক্তব্য আরও প্রশ্ন তুলছে। তাঁদের দাবি, বহু দিন ধরেই মর্গের ফ্রিজিং সিস্টেম অকেজো। ন্যূনতম সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় পরিবারকেই বরফ কিনে দিতে হয়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে, এবং এর আগে নাকি এ ধরনের ঘটনাও ঘটেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, মর্গ একটি রেস্ট্রিকটেড জোন। বাইরে থেকে প্রবেশের অনুমতি থাকে না। নিয়মিত নজরদারি হয়। ইঁদুরের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ তাদের কাছে নেই।

দুই পক্ষের বক্তব্যের অমিলে রহস্য আরও ঘনীভূত করেছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে মৃতদেহের চোখ গেল কোথায়?

মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও তদন্ত

যশোর রোড দিয়ে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের পথ আটকে অভিযোগ জানান প্রীতমের পরিজনেরা। মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত হস্তক্ষেপ করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

পুলিশও তদন্তে নেমেছে। ময়নাতদন্ত-সহ পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও রেকর্ডিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা কাজ শুরু করেছে।

তড়িঘড়ি চাকরি প্রদান 

প্রীতম ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য। সদ্যোজাত সন্তান, অসুস্থ স্ত্রী—এই পরিস্থিতিতে মৃতদেহের সঙ্গে এমন অমানবিক ঘটনার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম পরিবার। বুধবার মৃতের বাড়িতে পৌঁছে যায় চাকরির নিয়োগপত্র। মৃতের মা কৃষ্ণা ঘোষের হাতে ভূমি সংস্কার দফতরের চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। 

ইঁদুর, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চোখ সরানো হয়েছে?

ইঁদুর, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চোখ সরানো – এ নিয়ে জোরদার বিতর্ক চলছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই উঠে আসবে প্রকৃত সত্য। সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।

বিরোধীদের অভিযোগ 

তদন্তের আগে নিয়োগপত্র দেওয়ার বিষয়ে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। বিজেপির দাবি, ‘সরকারি হাসপাতালে অনিয়ম, চিকিৎসায় গাফিলতি ও অঙ্গ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দোষ স্বীকার করার বদলে পরিবারকে চুপ করাতে চাকরি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতাল থেকে অঙ্গ পাচার বাংলায় নতুন কিছু নয়। করোনার সময় বাংলার হাসপাতালগুলোতে অঙ্গ চুরি, নকল ভ্যাকসিন দেওয়া, এমনকি ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহারের মতো গুরুতর বিষয়গুলো উঠে এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও পদক্ষেপ নেননি। এখন তড়িঘড়ি চাকরি দিয়ে কী ধামাচাপা দিতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল?’ প্রশ্ন উঠছে, তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার আগে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে এই অতি সক্রিয়তা কেন?