ধর্মস্থলকে অপমানের চেষ্টা, ভুয়া মানবাধিকার দলের মধ্যে ছিল পাদ্রী এবং গুন্ডা, বলছে পুলিশ রিপোর্ট
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল দক্ষিণ কন্নড় জেলা পুলিশ সুপারের রিপোর্টে। জানা গিয়েছে, মানবাধিকার কমিশনের নামে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ধর্মস্থল মন্দিরকে ঘিরে এক বৃহৎ প্রতারণা ও অপপ্রচার চক্র সক্রিয় ছিল। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বেঙ্গালুরুর এক পাদ্রী জন সাইমন এবং হুবলির কুখ্যাত গুন্ডা মদন বুগুড়ি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—মানবাধিকার কমিশনের নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ, মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং ধর্মস্থল মন্দিরের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা।
🔹 ঘটনার সূত্রপাত
২৬ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে কন্নড়প্রভা দৈনিকে প্রকাশিত হয়—“গিরিশ মাটান্নার সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে ভুয়ো মানবাধিকার অফিসার, ছিলেন এক কুখ্যাত গুন্ডাও।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কর্ণাটক রাজ্য মানবাধিকার কমিশন নিজে থেকেই ১৯৯৩ সালের Protection of Human Rights Act–এর ধারা ১২ অনুযায়ী তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং বিষয়টি বেলথাঙ্গডি থানায় পাঠানো হয়।
🔹 তদন্তে উঠে আসে ভুয়ো পরিচয়
Shocking news
Police report reveals that Christian conversion-link behind Dharmasthala controversy.
It has come to light that John Simon from Bengaluru, who supported Girish Mattanna against Dharmasthala case, appeared under the guise of a Human Rights Commission officer. (1/2) pic.twitter.com/9QlY60lP7h
— 🚩Mohan Gowda🇮🇳 (@Mohan_HJS) October 7, 2025
তদন্তে জানা যায়, মানবাধিকার কর্মী মহেশ শেট্টি তিমারোড়ি যখন গিরিশ মাটান্নাভরকে সঙ্গে নিয়ে বেলথাঙ্গডি থানায় যান, তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মদন বুগুড়ি নামে এক ব্যক্তি নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের অফিসার বলে পরিচয় দেন। কিন্তু যাচাই করে পুলিশ জানতে পারে, সে কোনো পদে নেই। বরং তিনি হুবলির এক কুখ্যাত অপরাধী, যাকে একসময় হুবলি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে অপরাধীদের তালিকাভুক্ত ‘রোল কল’-এ প্রকাশ্যে হাজির করানো হয়েছিল।
🔹 পাদ্রী জন সাইমনের ভূমিকায় নতুন মোড়
তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে বেঙ্গালুরুর পাদ্রী জন সাইমনের নাম। তিনি নিজেকে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বলে দাবি করে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতেন।
পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইমন ডোডাবল্লাপুরে এক ব্যক্তিগত গির্জা পরিচালনা করেন এবং “Human Rights Anti-Corruption Social Justice Commission” নামে এক ভুয়ো এনজিও রেজিস্টার করেছেন। এই সংস্থার নাম ব্যবহার করে তিনি নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন এবং মিথ্যা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিতেন।
প্রতিবেদনে তাকে ‘স্বঘোষিত খ্রিস্টান পাদ্রী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি ‘মানবাধিকারের ছদ্মবেশে প্রশাসনের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন।’
🔹 ধর্মস্থল মন্দিরকে অপদস্থের চেষ্টা
৩০ আগস্ট, ২০২৫-এ গিরিশ মাটান্নাভর ও মদন বুগুড়ি ফের বেলথাঙ্গডি থানায় এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজেদের ধর্মস্থল মন্দিরের ‘ভক্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করেন।
কিন্তু পুলিশের দাবি—তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল মন্দিরের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা। বুগুড়ি সংবাদমাধ্যমকে ভুয়ো মানবাধিকার অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। তদন্তে আরও জানা গেছে, গিরিশ মাটান্নাভর, মহেশ শেট্টি তিমারোড়ি ও মহম্মদ সামির নামের এক ব্লগার মিলিতভাবে ধর্মস্থল মন্দিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছিলেন।
🔹 মামলা ও আইনি পদক্ষেপ
বেলথাঙ্গডি থানায় মামলা নং ১০০/২০২৫ নথিভুক্ত হয়েছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধি (Bharatiya Nyaya Sanhita, ২০২৩)-এর বিভিন্ন ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে—
ধারা ২০৪: প্রমাণ নষ্ট করা
ধারা ৩১৯(২): সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশ ধারণ
ধারা ৩৫৩(২): সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি
ধারা ৩(৫): কর্তৃত্বের গুরুতর অপব্যবহার
পুলিশের মতে, অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এই কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল।
🔹 পাদ্রীর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জন সাইমন একজন প্রতারক, যিনি মানবাধিকারের নামে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করেন। তার পাদ্রী পরিচয়, ভুয়ো এনজিও, এবং হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান—ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যের দিকে ইঙ্গিত করে।
প্রশাসনের সুপারিশ, ভবিষ্যতে যেন এমন ভুয়ো মানবাধিকার সংগঠনগুলি ধর্ম বা সমাজের নামে বিভাজন সৃষ্টির সুযোগ না পায়, তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
তথ্যসূত্র: The Commune