Sunday, October 12, 2025
Latestদেশ

‘অনুপ্রবেশের ফলে বদলে যাচ্ছে ভারতের জনবিন্যাস, বৃদ্ধি পাচ্ছে মুসলিম জনসংখ্যা’, পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন অমিত শাহ

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়া এবং মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকেই দায়ী করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ‘জনসংখ্যা ও জনবিন্যাস’ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, “মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ শুধুমাত্র জন্মহার নয়, বরং অবৈধভাবে অনুপ্রবেশই এর মূল কারণ।”

অমিত শাহ জানান, ”১৯৫১ সালে ভারতে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ৮৪ শতাংশ এবং মুসলিমদের ৯.৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী হিন্দুদের সংখ্যা কমে ৭৯ শতাংশে নেমেছে, অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.২ শতাংশে। তাঁর মতে, “এটি কেবল জনসংখ্যাগত পরিবর্তন নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।”

অমিত শাহ আরও বলেন, “ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ২৪.৬ শতাংশ হারে বেড়েছে, আর হিন্দু জনসংখ্যা ৪.৫ শতাংশ হারে কমেছে। এটা জন্মহারের জন্য নয়, বরং অনুপ্রবেশের ফলেই।” তাঁর দাবি, “পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ঝাড়খণ্ডে এই পরিবর্তন বিশেষভাবে স্পষ্ট, এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।”


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরে জানান, “পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১৩ শতাংশ, বর্তমানে তা মাত্র ১.৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা ২২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৯ শতাংশে। আফগানিস্তানে হিন্দু ও শিখ মিলিয়ে একসময় যেখানে ছিল ২.২ লক্ষ মানুষ, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ১৫০ জনে। শাহের দাবি, “এই হ্রাস ধর্মান্তরের কারণে নয়, বরং নির্যাতনের ফলে তাঁরা ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।”

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) সম্পর্কেও অমিত শাহ বলেন, “এই আইন কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়, বরং নির্যাতিতদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য করা হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, ১৯৫১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যেসব ঐতিহাসিক ভুল হয়েছে, সেগুলির সংশোধন মোদী সরকারের আমলে করা হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, “যারা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে এসেছে, তারা উদ্বাস্তু। কিন্তু যারা আর্থিক বা রাজনৈতিক স্বার্থে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে, তারা অনুপ্রবেশকারী।” তাঁর কথায়, “যদি সবাইকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়, তাহলে দেশটি এক ধর্মশালায় পরিণত হবে। তাই অনুপ্রবেশ বন্ধ করতেই হবে।”

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision – SIR) নিয়েও মুখ খোলেন শাহ। তিনি বলেন, “এটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন।” তাঁর অভিযোগ, “কিছু রাজনৈতিক দল অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছে।”

অমিত শাহ আরও বলেন, “যদি অনুপ্রবেশকারীরা ভোটার তালিকায় ঢুকে যায়, তারা দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে—যা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “ভারত একটি ভূ-সাংস্কৃতিক জাতি। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ ছিল এক ঐতিহাসিক ভুল। আজ যদি আমরা অনুপ্রবেশ রুখতে না পারি, তবে ভবিষ্যতে দেশের সংস্কৃতি, ভাষা ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে না। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে, ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কারণ অনুপ্রবেশকারীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং ভারতীয়দের অধিকার হরণ করছে।”