ইতালিতে বোরখা-হিজাব পরলে ৩০০০ ইউরো জরিমানা! আইন আনছে মেলোনি সরকার
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ইতালিতে প্রকাশ্য স্থানে বোরখা ও হিজাব পরা নিষিদ্ধ করতে আইন আনতে চলেছে জর্জিয়া মেলোনি নেতৃত্বাধীন সরকার। এছাড়া মসজিদের তহবিল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ইতালির শাসকদল ‘ব্রাদার্স অফ ইতালি’–এর তরফে সংসদে এই সংক্রান্ত একটি বিল ইতিমধ্যেই পেশ করা হয়েছে। সরকারের দাবি, দেশে ‘ইসলামি ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবাদ’ রুখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নতুন প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, বিপণি কেন্দ্র—সহ যে কোনও প্রকাশ্য স্থানে সম্পূর্ণ শরীর বা মুখ ঢেকে রাখা পোশাক পরা যাবে না। এর আওতায় স্পষ্টভাবে বোরখা ও হিজাবের উল্লেখ করা হয়েছে। আইন অমান্য করলে ৩০০ থেকে ৩০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে—যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৬ হাজার থেকে ২.৬ লাখ টাকার সমান।
প্রস্তাবিত আইনে জোরপূর্বক বিবাহের জন্য শাস্তি কঠোর করা হয়েছে এবং কুমারীত্ব পরীক্ষাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এগুলোকে সাংস্কৃতিক অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত ৮ অক্টোবর সংসদে মেলোনির দলের তিন জন সাংসদ বিলটি পেশ করেন। তাদের বক্তব্য, এই আইনের লক্ষ্য ধর্মীয় বিভাজন ও ঘৃণার প্রচার রোধ করা, পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতি জোরদার করা।
উল্লেখ্য, ইতালিতে ১৯৭৫ সাল থেকেই প্রকাশ্য স্থানে মুখ ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধের একটি পুরনো আইন রয়েছে। তবে সেই আইনে বোরখা বা হিজাবের নাম সরাসরি উল্লেখ করা ছিল না। চলতি বছর মেলোনির শরিক দল লিগ পার্টি এই আইন সংশোধনের দাবি তোলে, যাতে বোরখা ও হিজাবের মতো ধর্মীয় পোশাকের ওপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়।
মেলোনি সরকারের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, “এই বিলটি ফ্রান্সের আইনের অনুকরণে তৈরি। ২০১১ সালে ফ্রান্সে বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আমরাও সেই উদাহরণ অনুসরণ করছি।” ফ্রান্সের পর বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়া সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বোরখা নিষিদ্ধ করে।
বর্তমানে ইতালির পার্লামেন্টে মেলোনির জোট সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে বিশ্লেষকদের মতে, এই বিল পাশ হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
প্রসঙ্গত, ইতালির ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনগুলির মতে, ইতালিতে প্রায় ২০ লাখ মুসলিম বাস করে, যাদের বেশিরভাগই অভিবাসী শ্রমিক এবং তাদের পরিবার। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৩০ লাখের কাছাকাছি হতে পারে, যা ইতালির জনসংখ্যার প্রায় ৫%।
তথ্যসূত্র: Reuters