‘ভারত–ইজরায়েল সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ উচ্চতায়’
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ভারত ও ইজরায়েলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে — এমনটাই মন্তব্য করলেন ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিদেওন সা’আর (Gideon Sa’ar)। প্রথম সরকারি সফরে ভারতে এসে তিনি বলেন, “ভারত এখন গ্লোবাল সুপারপাওয়ার। আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। ভারতের বন্ধুত্বের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের (S. Jaishankar) সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, কৃষি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেন দুই নেতা। সা’আর জানান, খুব শীঘ্রই দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হবে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তার
বৈঠকের পর জয়শঙ্কর বলেন, “কৃষি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করার এক গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড তৈরি করেছি। সেই সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নেওয়া আমাদের উভয় দেশেরই স্বার্থে।” তিনি আরও যোগ করেন, “সেমিকন্ডাক্টর, সাইবার নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রেও ইজরায়েলের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা রয়েছে।”
জয়শঙ্কর জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে আয়োজিত হবে ‘এআই ইমপ্যাক্ট সামিট’, যেখানে ইজরায়েলের অংশগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত।
অভিবাসন ও শ্রম সহযোগিতা
ইজরায়েলে ক্রমবর্ধমান ভারতীয় শ্রমিকদের প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের অভিবাসন-সংক্রান্ত বোঝাপড়ার ফলে আজ ইজরায়েলে ভারতীয় কর্মীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাঁদের কিছু সমস্যা রয়েছে, যেগুলির সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।”
কৌশলগত ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্ব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। জয়শঙ্কর বলেন, “সন্ত্রাসবাদ আমাদের দুই দেশের জন্যই এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদের সকল রূপের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক পর্যায়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় রাখা প্রয়োজন।”
পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভারত ইজরায়েলের অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বন্দিদের প্রত্যাবর্তন এবং নিহতদের দেহাবশেষ ফেরত আসা আমরা স্বাগত জানাই। ভারত গাজার শান্তি–পরিকল্পনাকে সমর্থন করে এবং স্থায়ী সমাধানের আশা করছে।”
অর্থনৈতিক সম্পর্কের অগ্রগতি
দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি-কে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে আখ্যা দেন জয়শঙ্কর। তিনি জানান, “ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ইজরায়েলে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে অত্যন্ত আগ্রহী। রেল, সড়ক, বন্দর, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতের নতুন সক্ষমতা দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।”
ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের দৃঢ়তা
জয়শঙ্কর সা’আরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আপনার সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা পর্যালোচনা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের সম্পর্ক উচ্চমাত্রার বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।”
সা’আর বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী এবং আন্তরিক। প্রতিরক্ষা, কৃষি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত এগোচ্ছি। এই সম্পর্কের মজবুত ভিত্তিই আমাদের দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে।”


