Wednesday, December 17, 2025
দেশ

ঋতুস্রাবের সময় এখনও দেশের অনেক নারীদের কুঁড়েঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়

মুম্বাই: ঋতুচক্র তো মেয়েদের শরীরের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবুও এখনও দেশের হাজার হাজার নারী ও কিশোরীকে ঋতুস্রাবের সময় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। মাসিকের দিনগুলোতে তাদের বসবাসের অযোগ্য কুঁড়েঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়।

ভারতীয় সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের সামাজিকভাবে একটা নিষেধের আবহে কাটাতে হয়। ঋতুস্রাবের সময় নারীদের অশুচি বলে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এ সময় তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় সব অনুষ্ঠানে যোগ করতে দেওয়া হয় না। মন্দির, এমনকি রান্নাঘরেও ঢুকতে দেয়া হয় না।

মহারাষ্ট্রের অন্যতম দরিদ্র ও অনুন্নত একটি জেলা গাডচিরোলির মাদিয়া সম্প্রদায়ের নারীদের মাসিকের সময় চরম বিধিনিষেধের মুখে থাকতে হয়। প্রতি মাসের ওই পাঁচদিন তাদের থাকতে হয় একটা কুঁড়েঘরে। শুধু তাই নয়, এই কুঁড়েঘরগুলো হয় গ্রামের একেবারে বাইরে, জঙ্গলের কিনার ঘেঁষে।

কুঁড়েঘরগুলো গ্রামের একেবারে বাইরে হওয়ায় অনেকসময় মেয়েদের ওপর হামলাও ঘটে।

তাদের রান্না করতে দেয়া হয় না। গ্রামের কুয়া থেকে জল তুলতে দেওয়া হয় না। বাসার নারী আত্মীয়দের দেওয়া খাবার ও জল খেয়ে তাদের দিন কাটাতে হয়। যদি কোন পুরুষ তাদের ছুঁয়ে ফেলে, তাহলে ওই পুরুষকে সাথে সাথে গোসল করতে হয়, কারণ ওই ‘অপবিত্র’ নারীকে ‘ছুঁয়ে ফেলার কারণে সেও অপবিত্র হয়ে গেছে’ বলে মনে করা হয়।

তাঁরা বলছেন, এর আগে পিরিয়ডের সময় এগিয়ে আসলেই তারা ভয়ে কুঁকড়ে থাকতেন গ্রামের শেষে ভাঙাচোরা কুঁড়েঘরে থাকতে হবে ভেবে। কারণ মাটি আর বাঁশের তৈরি খড়ের চালের ওই ঘরে কোন জানালা বা দরজা নেই। আশেপাশে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছুই পাওয়া যায় না। স্নান করতে তাদের হেঁটে যেতে হয় এক কিলোমিটার দূরের নদীতে।

বসবাসের অযোগ্য এসব কুঁড়েঘর

ওই গ্রামের এক নারী বলেন, গ্রীষ্মকালে ওই কুঁড়েতে অসহনীয় গরম থাকে, আর থাকে মশার উৎপাত। শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর বর্ষায় ঘরের চাল দিয়ে অনবরত জল পড়ে ঘরের মাঝখানে পুকুর হয়ে যায়। কখনও কখনও কুকুর আর শূকরও ভেতরে ঢুকে আসে।

২১ বছর বয়সী তরুণী শীতল নারোতে বলেন, কুঁড়েঘরে একা থাকলে সারা রাত ঘুম আসে না ভয়ে। ভেতরে আর বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি বাড়ি যেতে চাই সর্বক্ষণ, কিন্তু কোন উপায় তো নেই।

৪৫ বছরের দুরপাতা উসেন্দি বলছেন, দশ বছর আগে ২১ বছরের এক নারী ওই কুঁড়েতে থাকার সময় সাপের কামড়ে মারা যায়। মাঝরাতের পর আমাদের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তখন কাঁদতে কাঁদতে আর চেঁচাতে চেঁচাতে সে কুঁড়ে থেকে ছুটে বাইরে যায়। তার নারী স্বজনরা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল, তাকে কিছু লতাপাতা আর স্থানীয় ওষুধ এনে দিয়েছিল।

এসব কুঁড়েঘরে সাপের উপদ্রব রয়েছে

পুরুষরা, এমনকি তার নিজের পরিবারের পুরুষরাও দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে। যেহেতু ওই তরুণীর মাসিক চলছিল তারা ওকে ছুঁতে পারেনি, কারণ ঋতুর সময়ে মেয়েরা যে অশুচি। সাপের বিষ তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে কাতরাতে কাতরাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় সে।

Somoresh Sarkar

গুরুদাস কলেজ থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ডিজিটাল সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত।