Sunday, December 21, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

ওমানে রফতানির ৯৯.৩৮ শতাংশ পণ্যে শুল্ক দিতে হবে না ভারতকে

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ওমানে বিনা শুল্কে কৃষিজাত পণ্য, বস্ত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বৈদ্যুতিন সামগ্রী, বিভিন্ন রাসায়নিক এবং গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানির সুযোগ পেতে চলেছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলি। সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-ওমান শূন্য শুল্কের বাণিজ্যচুক্তি কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (CEPA)। এই চুক্তিকে নর্থ ব্লকের ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ১৮ ডিসেম্বর ওমান সফরে গিয়ে এই বাণিজ্যিক সমঝোতায় পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ওমানের বাণিজ্য, শিল্প ও বিনিয়োগ প্রচারমন্ত্রী কাইস আল ইউসুফ সেপা চুক্তিতে সই করেন। সাক্ষী ছিলেন ওমানের সুলতান হাইথাম বিন তারিক।

৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা ভারতের জন্য

যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, সেপার আওতায় ভারতের জন্য ৯৮.০৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে ওমানে ভারতের মোট রফতানির ৯৯.৩৮ শতাংশ পণ্যের উপর কোনও শুল্ক দিতে হবে না। বিনিময়ে ওমানও ভারতের বাজারে শুল্কছাড়ের সুবিধা পাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ভারতের বাজারে ৭৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য করতে পারবে ওমান। অর্থাৎ, ভারতের দিকে ওমানের মোট রফতানির প্রায় ৯৪ শতাংশ পণ্যের উপর কর শূন্যে নেমে আসবে। তবে পেট্রোপণ্যকে এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ ছাড়ের বাইরে রাখা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে শুল্ক কমানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।

কৃষিপণ্যে সর্বাধিক লাভ

বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপা চুক্তিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে কৃষি ও খাদ্যপণ্য খাত। বর্তমানে এই পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয় ভারতকে, যা এক ধাক্কায় শূন্যে নামবে। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ, মাংস, মধু, শাকসব্জি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পশু ও উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল—সবই থাকবে বিনাশুল্কের তালিকায়।

বর্তমানে ওমান থেকে গড়ে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের পণ্য আমদানি করে ভারত। শুল্ক কমলে এই অঙ্ক ১২০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে, বলে আশা নর্থ ব্লকের।

কোটাভিত্তিক ছাড় কিছু পণ্যে

গয়ালের দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, খেজুর, মার্বেল এবং পেট্রোরাসায়নিক পণ্যের ক্ষেত্রে কোটাভিত্তিক শুল্কছাড় চালু হবে। খেজুরের ক্ষেত্রে বার্ষিক কোটা ২ হাজার টন। পলিথিলিন ও পলিপ্রোপিলিনের জন্য কোটার পরিমাণ যথাক্রমে ১৫০ কিলোটন ও ৭৫ কিলোটন। এই সীমার মধ্যে আমদানিতে শুল্ক লাগবে না, কোটার বাইরে গেলে স্বাভাবিক হারে কর ধার্য হবে।

বস্ত্র, যন্ত্রপাতি ও গাড়ি রফতানিতে উল্লম্ফন

উচ্চ শুল্কের বেশ কিছু পণ্যে কর কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নামাতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বস্ত্রশিল্প তার মধ্যে অগ্রভাগে। বর্তমানে বছরে ১০.৯ কোটি ডলারের কাপড় ওমানে পাঠায় ভারত। শুল্কছাড়ে তা বেড়ে ৪৩.৮ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে।

যন্ত্রপাতি রফতানি ২৬.২ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩৬০ কোটি ডলার, প্লাস্টিক ও রাবারে ১১৯ কোটি ডলার, এবং গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশে ১৯০ কোটি ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রক।

বৈদ্যুতিন সরঞ্জামে চিনের সঙ্গে লড়াই

ওমান বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম আমদানি করে। এর মধ্যে ভারতের অংশ মাত্র ১২.৩ কোটি ডলার। সেপার ফলে এই খাতে ভারতের রফতানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে বলে আশা, যদিও এখানে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চিন।

পরিষেবা ও কর্মসংস্থানে বড় সুবিধা

সেপা চুক্তিতে তথ্যপ্রযুক্তি, অডিয়ো-ভিস্যুয়াল, গবেষণা ও উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেশাদার ও ব্যবসায়িক পরিষেবায় যৌথ কাজের পথ খুলেছে। ওমানে কর্মরত ভারতীয় সংস্থাগুলি এখন ২০ শতাংশের বদলে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভারতীয় কর্মী রাখতে পারবে।

চুক্তিভিত্তিক পরিষেবা সরবরাহকারীদের থাকার মেয়াদ ৯০ দিন থেকে বাড়িয়ে দু’বছর করার বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত। হিসাবরক্ষক, চিকিৎসক, স্থপতি ও কর বিশেষজ্ঞদের জন্য বাজার খুলছে, যদিও কিছু শর্ত আরোপ করেছে ওমান।

মোদীর বার্তা

সেপাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এটি আমাদের ভবিষ্যতের নীলনকশা। মান্ডভি থেকে মাস্কাট পর্যন্ত আরব সাগর আমাদের সংযোগের শক্তিশালী সেতু। সভ্যতার শুরু থেকেই ভারত-ওমানের সামুদ্রিক বাণিজ্য আমাদের সম্পর্ককে গভীর করেছে।”

সার্বিক ভাবে, সেপা চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হল বলেই মনে করছে নীতিনির্ধারক মহল।