ফের ভেস্তে গেল আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ফের ভেস্তে গেল আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা। ইস্তানবুলে তৃতীয় দফার শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ফের তীব্র হল পাকিস্তান-আফগানিস্তান দ্বন্দ্ব। আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পরস্পরকে দোষারোপ করছে কাবুল-ইসলামাবাদ। এই আবহে সরাসরি ইসলামাবাদকে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিল আফগানিস্তানের তালিবান সরকার।
তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা চলছিল। সীমান্তে সাম্প্রতিক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সমাধানসূত্রে পৌঁছানোর আগেই আলোচনাটি ভেস্তে যায় বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর আফগান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লা মুজাহিদ পাকিস্তানের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান গোড়া থেকেই শান্তি-বৈঠকে বাধা সৃষ্টি করছিল। তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অসহযোগিতামূলক আচরণে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “না নিজেদের, না আফগানিস্তানের নিরাপত্তা—কোনও দিকেই মনোযোগ নেই ইসলামাবাদের।”
জবিহুল্লা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আফগানিস্তানের মাটি অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আফগান নাগরিকদের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা তাঁদের ইসলামি ও জাতীয় দায়িত্ব।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “যদি কেউ আগ্রাসনের চেষ্টা করে, আল্লাহর সাহায্যে এবং দেশের মানুষের ঐক্যে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খোয়াজা আসিফও বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত চতুর্থ দফার বৈঠকের কোনও পরিকল্পনা নেই।
আফগান সরকারের উপজাতি ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী নুরউল্লাহ নুরি আরও কঠোর ভাষায় বলেন, “আফগানিস্তানের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। নিজেদের প্রযুক্তি নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগবেন না। যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে আফগানিস্তানের প্রবীণ থেকে নবীন—সবাই দেশের পক্ষেই রুখে দাঁড়াবে।”
তালিবান মুখপাত্রের দাবি, পাকিস্তানের সঙ্গে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর সমস্যা নতুন নয়, ২০০২ সাল থেকেই তা চলছে। আফগানিস্তানে তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠার পর সেই উত্তেজনা আরও বাড়েনি, বরং সমাধানের পথ খুঁজতে চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু পাক সেনা সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। কূটনৈতিক মহল আশঙ্কা করছে, যদি পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে এক নতুন সংঘাতের অধ্যায় শুরু হতে পারে।


