Monday, December 22, 2025
কলকাতা

India-New Zealand Free Trade Agreement: চূড়ান্ত হলো ভারত-নিউজিল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, ৫ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ হবে

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: সোমবার ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি দু’দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সনের মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথনের সময়ই এই ‘ঐতিহাসিক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক’ চুক্তির ঘোষণা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী লাক্সনের মার্চ ২০২৫-এ ভারত সফরের সময় FTA নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। মাত্র ৯ মাসে চুক্তি সম্পন্ন হলো।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বড় প্রত্যাশা

এই চুক্তির মাধ্যমে বাজারে প্রবেশাধিকার সহজ হবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং কৌশলগত সহযোগিতা শক্তিশালী হবে। উদ্ভাবক, উদ্যোগপতি, কৃষক, MSME, ছাত্রছাত্রী ও যুবসমাজ সব ক্ষেত্রেই নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা। দুই দেশ আগামী ৫ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছে। পাশাপাশি, আগামী ১৫ বছরে ভারতে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে নিউজিল্যান্ড।

শুল্কছাড় ও বাজার প্রবেশাধিকার

চুক্তি অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ড ১০০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্ক তুলে নেবে। ফলে ভারতের সমস্ত রপ্তানি পণ্যই পাবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার। অন্যদিকে, ভারত ৭০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্ক ছাড় দেবে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশকে কভার করে। এটি ভারতের দ্রুততম সম্পন্ন হওয়া FTAগুলির অন্যতম এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’-এর লক্ষ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শ্রমনির্ভর ক্ষেত্র – বস্ত্র, পোশাক, চামড়া, জুতো, সামুদ্রিক পণ্য, রত্ন ও গয়না, হস্তশিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী ও অটোমোবাইল- এই সব ক্ষেত্রে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে ধারণা। এতে শ্রমিক, কারিগর, মহিলা ও MSME-রা সরাসরি উপকৃত হবেন। তবে কৃষক ও ঘরোয়া শিল্প রক্ষায় দুগ্ধজাত পণ্য, কফি, চিনি, পেঁয়াজ, মশলা, ভোজ্য তেল, রাবার প্রভৃতি সংবেদনশীল পণ্যকে বাজার প্রবেশাধিকার থেকে বাদ রাখা হয়েছে।

পরিষেবা ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত

পরিষেবা খাতে এটি নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিশ্রুতি। IT পরিষেবা, পেশাদার পরিষেবা, শিক্ষা, আর্থিক পরিষেবা, পর্যটন, নির্মাণসহ একাধিক ক্ষেত্রে ভারত উল্লেখযোগ্য বাজার প্রবেশাধিকার পেয়েছে।

এছাড়া একটি ‘ফিউচার-রেডি’ মোবিলিটি ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ভারতীয় পেশাদার, ছাত্র ও যুবকদের জন্য ভিসা ও থাকার সুবিধা থাকবে। নতুন ‘টেম্পোরারি এমপ্লয়মেন্ট এন্ট্রি ভিসা’ ব্যবস্থায় একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৫,০০০ ভারতীয় পেশাদার ৩ বছর পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে কাজের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে আয়ুষ চিকিৎসক, যোগ প্রশিক্ষক, ভারতীয় রাঁধুনি, সঙ্গীত শিক্ষক ছাড়াও IT, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নির্মাণ ক্ষেত্রের কর্মীরা থাকবেন।

কৃষি ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতা

কৃষি ক্ষেত্রে কিউইফল, আপেল ও মধু নিয়ে আলাদা এগ্রি-টেক অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া হয়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, গবেষণা সহযোগিতা, গুণমান উন্নয়ন ও ভ্যালু চেন শক্তিশালী করার মাধ্যমে ভারতীয় কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হবে।

বর্তমান বাণিজ্য চিত্র

২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে ভারত–নিউজিল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন ডলার। পণ্য ও পরিষেবা মিলিয়ে মোট বাণিজ্য দাঁড়ায় প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার।

সার্বিকভাবে, এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ভারত–নিউজিল্যান্ড সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই মত দু’দেশের। বাণিজ্যের পাশাপাশি শিক্ষা, ক্রীড়া ও মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ আরও গভীর হবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।