Monday, December 22, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

‘ধর্ম অবমাননার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি’, দীপু দাস হত্যাকাণ্ডে জানালো র‌্যাব

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশের ময়মনসিংহে যুবক দীপু দাসকে পিটিয়ে খুন ও দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানাল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের দাবি, নিহত যুবক কোনও উসকানিমূলক মন্তব্য করেননি, এমনকি সমাজমাধ্যমেও ধর্ম সংক্রান্ত কোনও পোস্ট করেননি।

নিহত দীপু দাস ময়মনসিংহের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। গত দু’বছর ধরে তিনি ভালুকা এলাকায় একটি কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৯ টা নাগাদ হঠাৎই একদল বিক্ষোভকারী ওই কারখানায় চড়াও হয়। চলে ব্যাপক ভাঙচুর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেই সময় দীপুকে টেনে হিঁচড়ে কারখানার বাইরে বের করে আনা হয়। এরপর প্রকাশ্যে গণপিটুনি দেওয়া হয় তাঁকে।

এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা দীপুর দেহ ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে যায়। সেখানে একটি গাছে বেঁধে তাঁর দেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার সময় একাধিক স্লোগানও ওঠে। প্রাথমিকভাবে দাবি করা হয়, ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগেই দীপুকে হত্যা করা হয়েছে। তবে সেই দাবি নস্যাৎ করে দিল খোদ র‌্যাব।

সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠকে ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪ কোম্পানির কমান্ডার মহম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, “নিহত ব্যক্তি ধর্ম নিয়ে কোনও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন এমন কিছু কেউ শোনেননি। তিনি সমাজমাধ্যমেও এ ধরনের কিছু লেখেননি।” তিনি আরও জানান, “ওই রাতে একদল উত্তেজিত বিক্ষোভকারী কারখানার বাইরে জড়ো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কারখানার অন্যান্য শ্রমিকরাই দীপুকে উন্মত্ত জনতার হাতে তুলে দেন বলে অভিযোগ।”

র‌্যাব কর্তার কথায়, “কিছু অভিযোগ এসেছে যে কারখানার ভিতরেই কয়েকজন তাঁকে মারধর করছিলেন। বাইরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তাঁরা দীপুকে জনতার হাতে তুলে দেন।”

নিহত দীপু দাসের পরিবার এই হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে। তাঁর ভাই কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, “এলাকার মানুষ জানে আমার ভাই কেমন ছিল। মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে খুন করা হয়েছে।” যদিও ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ বা কর্মীদের কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নিহতের বড় বোন চম্পা দাসের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাঁর দাবি, “আমার ভাই শিক্ষিত মানুষ ছিল। ধর্ম সম্পর্কে তার ভালো জ্ঞান ছিল। সে এমন কাজ করতেই পারে না। আমি শুনেছি, কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়েছিল। সেই কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাঁকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।”

ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ যে ভিত্তিহীন, তা প্রাথমিক তদন্তেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।