G20 Summit in South Africa : দক্ষিণ আফ্রিকার জি২০ সম্মেলনে ভারতের জয়জয়কার
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকার অনুষ্ঠিত চলতি বছরের জি২০ সম্মেলনে ভারতের জয়জয়কার। ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট প্রতিফলিত হলো ভারতের গত বছরের সভাপতিত্বকালের মূল ভাবনা, অগ্রাধিকার ও কূটনৈতিক অবস্থান। বিশেষ করে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর স্বার্থরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন, সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য ও প্রযুক্তিগত ন্যায়পরায়ণতা—সবক্ষেত্রেই ভারতের সুরই ছিল প্রধান সুর।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স—ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থানের প্রতিধ্বনি
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ যে কোনও রূপেই আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য হুমকি। গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ বৈশ্বিক অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি ভারতের কূটনীতির ধারাবাহিক প্রয়াসেরই ফল। এপ্রিলের পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য চাপ দিচ্ছে, জি-২০ ঘোষণায় ‘সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদের’ নিন্দা করা হয়েছে।
AI ও উদীয়মান প্রযুক্তিতে ‘নিরাপত্তা-স্বচ্ছতা’—ভারতের ভূমিকা সুদৃঢ়
ডিজিটাল উন্নয়ন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘নিরাপদ, সুরক্ষিত ও আস্থাযোগ্য’ কাঠামো গড়ে তোলার দাবি জোরালো ভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ঘোষণাপত্রে। মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা ও দায়িত্বশীল প্রযুক্তিনীতির পক্ষে ভারতের অবস্থান এখানে হুবহু প্রতিফলিত। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত আয়োজিত এআই ইমপ্যাক্ট সামিটের আগে, ঘোষণাপত্রে নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং বিশ্বাসযোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন, স্থাপন এবং ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
নারী-ক্ষমতায়নে অগ্রাধিকার
গত বছর ভারতের সভাপতিত্বে জি২০ আলোচনার মূল স্তম্ভ ছিল নারী ও কন্যার ক্ষমতায়ন। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘোষণাপত্রেও এই নীতি আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে ভারতের উদ্যোগকে স্বীকৃতি
ভারতের নেতৃত্বে শুরু হওয়া দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচিকে দক্ষিণ আফ্রিকাও এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ‘দুর্যোগ-সহনশীল পরিকাঠামো জোট’ (CDRI)-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলে নথিভুক্ত হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে অর্থায়নে—উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে ভারতের অবস্থান
ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে, জলবায়ু অর্থায়নকে কয়েক বিলিয়ন নয়, ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা ছাড়া ভবিষ্যৎ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রয়োজন ৫.৮–৫.৯ ট্রিলিয়ন ডলার—এটি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে ভারতের অবস্থানেরই সমর্থন জানানো হয়েছে।
টেকসই জীবনধারা ও ভোগব্যবস্থা—LiFE ধারণার স্থান
উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে টেকসই নীতি গড়ে তুলতে ভারতের প্রস্তাবিত ‘LiFE’ ধারণা শীর্ষক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সংস্কারের ডাক
ভারতের বহুদিনের দাবি—সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো পুনর্গঠন—ঘোষণাপত্রে তা গুরুত্ব সহকারে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটিকে একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা এবং দাবির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা যায়, একই সাথে এটিকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, দক্ষ, কার্যকর, গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক করে তোলা যায়।
খাদ্য নিরাপত্তায় ভারতের উদ্যোগ
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ভারতের উদ্যোগ আবারও সসম্মানে জায়গা পেয়েছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যভিত্তিক ও সম্পূরক চিকিৎসাব্যবস্থার গুরুত্বও পুনরায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার জি২০ ঘোষণাপত্রের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েই ভারতের ভাষা, চিন্তা ও অগ্রাধিকার দৃশ্যমান। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের বাড়তে থাকা প্রভাব ও নেতৃত্বেরই এটি বড় প্রমাণ।


