Terror Doctor’s Confession : ‘২০২৩ সাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা, চলছিল বিস্ফোরক সংগ্রহ, ২৬ লাখ তুলেছিল নিজেরাই’, জেরায় স্বীকারোক্তি ধৃত শাকিলের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দিল্লির সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়—বরং দীর্ঘদিনের একটি সংগঠিত জঙ্গি চক্রের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তদন্তে নেমে এনআইএ–র হাতে উঠে এসেছে এমন এক মডিউলের চিত্র, যারা অন্তত ২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন শহরে ধারাবাহিক হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে আসছিল। জইশ–সমর্থিত এই ‘হোয়াইট কলার মডিউল’ আর্থিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত সক্ষম ছিল বলে দাবি করছে তদন্তকারী সংস্থা।
বিস্ফোরক সংগ্রহ করেছিল তারা
এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের মূল সংগঠক হিসেবে উঠে এসেছে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ মুজাম্মিল শাকিলের নাম। সে আত্মঘাতী জঙ্গি উমর মহম্মদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। জেরায় শাকিল স্বীকার করেছে, ২০২৩ সাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা চলছিল। সেই উদ্দেশ্যেই বিস্ফোরক তৈরির উপাদান, ডেটোনেটর, রিমোট এবং অন্যান্য সরঞ্জাম জোগাড়ের কাজ হাতে নেয় তারা।
তদন্তে জানা গেছে, শাকিলের দায়িত্ব ছিল ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংগ্রহ করা—যথাযথ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় যেগুলি অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরকে পরিণত হতে পারে। গুরুগ্রাম ও নুহ থেকে ২৬ কুইন্টাল এনপিকে সার কেনার প্রমাণ পেয়েছে এনআইএ। সার গুঁড়ো করার জন্য ব্যবহৃত একটি ময়দা পেষাই মেশিনও উদ্ধার হয়েছে।
উমরের ভূমিকা ও বিস্ফোরণ
উমর মহম্মদ ছিল মডিউলের বিস্ফোরক প্রস্তুতকারক। সারের রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিস্ফোরণে ব্যবহৃত উপাদান সংগ্রহের কাজ তারই দায়িত্বে ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, দিল্লির বিস্ফোরণে আত্মঘাতী হামলাকারীও ছিল উমর নিজেই।
নিজেরাই তুলেছে ২৬ লক্ষ টাকার ফান্ডিং
চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অর্থের উৎস নিয়ে। কোনও বিদেশি ফান্ড নয়—এই মডিউল নিজেরাই ২৬ লক্ষ টাকা তুলেছিল। এর মধ্যে মুজাম্মিল ৫ লক্ষ, উমর ২ লক্ষ, আদিল রাদার ৮ লক্ষ, মু্জাফ্ফর রাদার ৬ লক্ষ এবং লখনউয়ের শাহিন সইদ ৫ লক্ষ টাকা দেয়। এই অর্থেই বিস্ফোরক, সার, অস্ত্র—সব কেনা হয়েছিল। এনআইএ বলছে, এটি ছিল অত্যন্ত সংগঠিত এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, ৬.৫ লক্ষ টাকায় কেনা একটি একে–৪৭ রাইফেল আদিল রাদারের লকার থেকে উদ্ধার হয়েছে। মডিউলের হ্যান্ডলার হিসেবে উঠে এসেছে মুনসুর ও হাশিমের নাম। তারা আবার ‘ইব্রাহিম’ নামের এক ব্যক্তির নির্দেশে কাজ করত।
আন্তর্জাতিক সংযোগ: তুরস্ক সফর এবং টিটিপি যোগ
এই মডিউলের আন্তর্জাতিক যোগাযোগও মিলেছে। মুজাম্মিল, আদিল এবং মু্জাফ্ফর ওকাসা নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে তুরস্কে গিয়েছিল। ওকাসার যোগ রয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-এ-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র সঙ্গে। পরিকল্পনা ছিল আফগানিস্তানে ঢোকার, তবে নির্দেশ না আসায় তারা ফেরে। ওকাসার সঙ্গে যোগাযোগ হতো টেলিগ্রামের মাধ্যমে। জিজ্ঞাসাবাদের পর সেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
তদন্তের অগ্রগতি
এখন উমর ছাড়া বাকিরা এনআইএ–র হেফাজতে। তদন্তকারীদের মতে, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আগেভাগে উদ্ধার না হলে একাধিক ভারতীয় শহর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মুখে পড়তে পারত। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে—দিল্লির বিস্ফোরণ ছিল শুধু ট্রায়াল রান, আর এর পেছনে লুকিয়ে ছিল বহুস্তরীয় বৃহৎ জঙ্গি ষড়যন্ত্র।


