Talaq-e Hasan : ‘মাসে এক বার করে ৩ মাস ‘তালাক’ বললেই বিবাহবিচ্ছেদ!’, এটা কোনও সভ্য সমাজে চলতে পারে না, তীব্র ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: মাসে এক বার করে ৩ মাস স্ত্রীর উদ্দেশে ‘তালাক’ বললেই বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন—মুসলিম সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এই রীতি ‘তালাক-ই-হাসান’। কিন্তু আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে এমন প্রথা আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না, তা নিয়ে কড়া প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রয়োজনে বিষয়টি পাঠানো হতে পারে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে। রীতিমতো বিষয়টি নিয়ে তীব্র ভৎসর্না সুপ্রিম কোর্টের।
আদালতের কঠোর পর্যবেক্ষণ
বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঞা এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ জানিয়েছে— “২০২৫ সালে এমন প্রথা কীভাবে প্রচার করা যায়? যে ধর্মেই বিশ্বাসী হই না কেন, এই রীতি কি সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য? নারীর মর্যাদা রক্ষার জায়গা কোথায়?”
বেঞ্চ আরও স্পষ্ট করে জানায়, এই প্রক্রিয়া যদি সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে, আদালতকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে।
প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ ও সমস্যার পাহাড়
তালাক-ই-হাসানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন একদল মুসলিম মহিলা। তাঁদের অভিযোগ, স্বামীরা মাসে এক বার করে ‘তালাক’ উচ্চারণ করে আইনজীবীর হাত দিয়ে নোটিস পাঠাচ্ছেন।
হঠাৎ বিচ্ছেদের ফলে সন্তানের পড়াশোনা, ভ্রমণ নথি, পাসপোর্টসহ নানা ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে জটিলতা
৩ মাসে সহবাস হলে তালাক বাতিল—এই নিয়মও একতরফা ও অবমাননাকর বলে দাবি মহিলাদের।
আবেদনকারীদের সাহস ও উদ্যোগের প্রশংসা করেছে আদালত। বেঞ্চের মন্তব্য—দেশে এই ধরনের অন্যায় প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত আরও অসংখ্য মহিলা আছেন, যাঁরা ভয় বা সামাজিক চাপে মুখ খুলতে পারেন না।
সমর্থনকারী স্বামীর আইনজীবীকে ভর্ৎসনা
তালাক-ই-হাসানকে সমর্থনকারী স্বামীর আইনজীবীকেও ভর্ৎসনা করেছে আদালত। বেঞ্চের তির্যক প্রশ্ন— “এটা কী ধরনের প্রথা? সভ্য আধুনিক সমাজ কি এমন আচরণ মেনে নিতে পারে?”
তিন তালাকের রায় ও নতুন বিতর্ক
এর আগে, ২০১৭ সালে ‘তিন তালাক’ প্রথাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ভারত সরকার। আদালত জানায়, এই প্রক্রিয়া ‘স্বেচ্ছাচারী’। মুসলিম মহিলাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। এটি বাতিল ও বেআইনি।
এবার ‘তালাক-ই-হাসান’-ও সেই একই পথে বৈধতার প্রশ্নের মুখে।
কমিশনগুলির মতামতও চাওয়া হয়েছিল
এই মামলার আগে জাতীয় মহিলা কমিশন, মানবাধিকার কমিশন এবং শিশুসুরক্ষা কমিশনের মতামতও জানতে চেয়েছিল আদালত।
পরবর্তী পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, বিষয়টি বৃহত্তর সাংবিধানিক ব্যাখ্যার দাবি রাখে। তাই খুব শীঘ্রই মামলাটি পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হতে পারে।


