কেরালার মহাবিষ্ণু মন্দিরে ভোরে ভক্তিগীত বাজানো বন্ধের দাবি কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: কেরালার মালাপ্পুরম জেলায় একটি স্থানীয় পঞ্চায়েত ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)। ইউডিএফয়ের বিজয় মিছিল ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কোলাপ্পাড মহাবিষ্ণু মন্দিরের সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় মন্দিরে বাজানো ভোরের ভক্তিগীত বন্ধের দাবিতে স্লোগান দেয় ইউডিএফ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
অভিযোগ, বিজয় মিছিলটি মহাবিষ্ণু মন্দিরের সামনে পৌঁছনোর পর কিছু অংশগ্রহণকারী স্লোগান তোলেন, মন্দিরের ভক্তিগীত মন্দির চত্বরের বাইরে শোনা যাওয়া উচিত নয় এবং এই প্রথা বন্ধ করা হবে। ওই স্লোগানের পরই ‘ইউডিএফ জিন্দাবাদ’ ধ্বনি ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোলাপ্পাড মহাবিষ্ণু মন্দিরে বহু বছর ধরে ভোর ৫ টা নাগাদ ‘সুপ্রভাতম’ সহ বিভিন্ন ভক্তিগীত বাজানো হয়। কেরালার বহু মন্দিরেই ভোরবেলা এই ধরনের ভক্তিগীত বাজানো একটি প্রচলিত ধর্মীয় রীতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এতদিন এই ভক্তিগীত নিয়ে কোনও আপত্তি ওঠেনি।
A new FATWA from Muslim League IN KERALA; Suprabhatham Bhajan from temples should not be heard outside.🚨🚨
This shocking slogan was raised during congress victory celebrations in Edavanna, Malappuram. Muslim League workers openly shouted provocative slogans saying that temple… pic.twitter.com/rPCFkh0EmM
— MAHARATHI (@MahaRathii) December 17, 2025
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভক্তিগীত বাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশি অনুমতি নেওয়া হয়েছে এবং প্রচলিত শব্দনিয়ম মেনেই সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। তা সত্ত্বেও ইউডিএফ কর্মীদের তরফে ভক্তিগীত বন্ধের দাবিতে স্লোগান ওঠায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দা ও বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে।
উল্লেখ্য, ইউডিএফ বর্তমানে কেরালা বিধানসভায় বিরোধী জোট হলেও সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে কিছু জায়গায় সাফল্য পেয়েছে। এডাভান্নার এই বিজয় মিছিল ছিল কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)-এর যৌথ কর্মসূচি। মিছিলে দুই দলেরই পতাকা দেখা গিয়েছে।
সমালোচকদের মতে, এই স্লোগান শুধুমাত্র শব্দদূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। তাঁদের দাবি, ইউডিএফ ক্ষমতায় এলে হিন্দু মন্দিরগুলির কিছু ধর্মীয় প্রথা। বিশেষ করে লাউডস্পিকারে ভক্তিগীত বাজানো নিয়ে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে। এমন ইঙ্গিতই এই ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।
এছাড়াও মালাপ্পুরম জেলায় মসজিদগুলিতে দিনে ৫ বার লাউডস্পিকারে আজান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে লাউডস্পিকার ব্যবহৃত হলেও মন্দিরের ভোরের ভক্তিগীতকে লক্ষ্য করে আপত্তি তোলা ‘নির্বাচনী ও পক্ষপাতদুষ্ট’ মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।
ঘটনার জেরে হিন্দু সংগঠনগুলির একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঁরা জানিয়েছে, সংবিধানস্বীকৃত ধর্মাচরণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। বিশেষ করে যখন তা আইন ও নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা যদি সংবেদনশীলভাবে মোকাবিলা না করা হয়, তবে তা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ আরও বাড়াতে পারে।
সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সমান ও স্বচ্ছভাবে প্রয়োগযোগ্য শব্দবিধি মেনে চলা উচিত। প্রশাসনিক স্তরে একক ও নিরপেক্ষ নীতি কার্যকর না হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলেই মত পর্যবেক্ষকদের।
তথ্যসূত্র: Hindu Post , The Commune


