Monday, November 24, 2025
Latestরাজ্য​

পশ্চিমবঙ্গে শিল্পকে গলা টিপে খুন করেছে তৃণমূল, ১৫ বছরের অপশাসন শেষে মানুষ পরিবর্তন চাইছে: শমীক ভট্টাচার্য

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: ১৯৫০-৫১ সালে ভারতের মোট শিল্প উৎপাদনের ২৪% ছিল পশ্চিমবঙ্গের। ২০২১-২২ সালে তা নেমে ৩.৫%—এ এক লজ্জাজনক ধস। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তৃণমূলকে কড়া আক্রমণ করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

এক্সে দীর্ঘ পোস্টে শমীক ভট্টাচার্য লিখেছেন, “এগিয়ে বাংলা — কোনদিকে? আসলে পিছন দিকেই! ‘এগিয়ে বাংলা’—দেখতে নিষ্পাপ দু’টি শব্দ। অথচ এর আড়ালে রয়েছে এক বিপজ্জনক প্রতারণা। সরকারি বিজ্ঞাপন আর উৎসব-উৎসব পরিবেশ তৈরি করে সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দেওয়াই আজ তৃণমূল সরকারের মূল লক্ষ্য। শাসকদলের কৌশল একটাই—উৎসবের আলোয় চোখ ঝলসে দাও, যেন অর্থনীতি–শিক্ষা–স্বাস্থ্যের ভাঙা চিত্র মানুষ দেখতে না পায়। আসলে ‘এগোনো’র নামে বাংলা পিছোচ্ছে ভয়ানক গতিতে। তারই জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা–বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের। তাই প্রশ্ন ওঠে—বাংলা এগোচ্ছে তো? নাকি আমাদের ভবিষ্যৎকে পিছন দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে?

১৯৬০-৬১ সালে দেশের মোট জাতীয় আয়ের ১০.৫% দিত পশ্চিমবঙ্গ। ২০২৩-২৪ সালে তা কমে ৫.৬%—অর্ধেকেরও কম। মাথাপিছু আয় যেখানে একসময় ছিল জাতীয় গড়ের ১২৭.৫%, সেখানে এখন নেমে ৮৩.৭%।

যে বাংলা একসময় দেশকে পথ দেখাত, আজ সেই বাংলা দেশের নিচের দিকে টেনে নামছে।

ঋণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ২০১১ সালে ঋণ ছিল ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ সালে তা ফুলে-ফেঁপে ৬.৩ লক্ষ কোটি! মাথাপিছু ঋণ ২০,৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৯,০০০ টাকা।

এই বিপুল ঋণ কি নারীর সুরক্ষা, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান বা সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য ডিএ-তে খরচ হচ্ছে? না। এটা খরচ হচ্ছে মেলা–খেলা–মোচ্ছবের নামে রাজনৈতিক প্রচার চালাতে। উৎসবের ললিপপ দিয়ে অর্থনীতির শ্মশান ঢেকে রাখাই তৃণমূলের একমাত্র নীতি।

শিল্প: একসময়ের অগ্রদূত বাংলা আজ মৃতপ্রায়। ১৯৫০-৫১ সালে দেশের মোট শিল্প উৎপাদনের ২৪% ছিল পশ্চিমবঙ্গের। ২০২১-২২ সালে তা নেমে ৩.৫%—এ এক লজ্জাজনক ধস।

একসময় ১০১টি জুটমিল ছিল। ১৯৬০-৬১ সালে উৎপাদন ৯ লক্ষ MT, ২০২৫ সালে তা ৭ লক্ষ MT—দুই-আড়াই প্রজন্মে কোনো বৃদ্ধিই নেই, বরং মারাত্মক পতন।

হুগলির জুটমিলে আজ তালা ঝুলছে, ঘুঘু পাখি চরছে। শ্রমিকের আর্তনাদ শুনতে কেউ নেই। তৃণমূল সরকার শুধু স্লোগান বানাতে জানে—শিল্প বানাতে জানে না।

১৯৫৫ সালে দেশের মোট ব্যাংকিং লেনদেনের ২৮% ছিল পশ্চিমবঙ্গের। ২০২৪ সালে তা নেমে ৬%—এ এক অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ।

FDI–র ক্ষেত্রেও আরও বড় লজ্জা। ১৯৯১ সালে ভারতজুড়ে FDI-র ১২% পেত পশ্চিমবঙ্গ—দেশের মধ্যে প্রথম। আজ? ২০২৩-২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের FDI ১%–এর নিচে। ২০১৯–২০২৪ পাঁচ বছরে মোট FDI ০.৬৬%। এদিকে মহারাষ্ট্রে ৩১%, গুজরাতে ১৬.৫%।

তাই বলা হয়—মুখ্যমন্ত্রী নিজের রাজনৈতিক জেদে পশ্চিমবঙ্গকে গুজরাত হতে দেননি; বরং অন্ধকারে ডুবিয়েছেন।

নীতির ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক স্বার্থই বাংলার সর্বনাশের মূল কারণ। এটা শুধু সংখ্যার পতন নয়- এটা নীতিহীনতা, এটা শিল্পবিমুখতা, এটা দলীয় স্বার্থে রাজ্য পরিচালনা, এটা রাষ্ট্রের বদলে পার্টির রাজত্ব কায়েম করা।

যে বাংলা একসময় শিল্প-বাণিজ্যের রাজধানী ছিল, আজ সেই বাংলার কারখানাগুলোর গেট বন্ধ, চিমনি ঠান্ডা, শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

এ শুধু অর্থনীতির ক্ষতি নয়— এটা আমাদের আত্মপরিচয়ের ক্ষয়।”