ইউরোপজুড়ে বাড়ছে সন্ত্রাস-আতঙ্ক; বাড়ানো হলো সীমান্ত নজরদারি
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: জার্মানি ইউরোপ ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন ভ্রমণ-সতর্কতা জারি করেছে। স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, ফিনল্যান্ড-সহ বহু দেশে কঠোর সীমান্ত নজরদারি, পরিচয় যাচাই করছে। বাড়তে থাকা সন্ত্রাসের ঝুঁকি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্পেন: সন্ত্রাস হুমকি ও পর্যটক নিরাপত্তা
২০১৭ সালের বার্সেলোনা ও ক্যামব্রিলস হামলার পর থেকেই স্পেনে সতর্কতা জারি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নথি অনুযায়ী, সন্ত্রাসের ঝুঁকি এখনও বাস্তব এবং উচ্চ-প্রোফাইল পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অপরাধপ্রবণ এলাকা: বার্সেলোনা, মাদ্রিদ – লা রাম্বলা, মেট্রো স্টেশন, পর্যটন জোন এলাকাগুলোতে পকেটমার, ব্যাগ ছিনতাই, পর্যটকদের লক্ষ্য করে চুরি–ছিনতাই বাড়ছে। শীতকালীন ছুটি বা উৎসবের সময় এই ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পায়।
ইতালি: কড়া সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ
ভ্যাটিকান, কলোসিয়াম, মিলান ও ভেনিসের মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিনই পকেটমার ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
প্রবেশের নতুন নিয়ম: নন-ইইউ পর্যটকদের পাসপোর্ট শেনজেন ত্যাগের অন্তত তিন মাস অতিরিক্ত বৈধ থাকতে হবে। লাগেজে নগদ অর্থ, নির্দিষ্ট পণ্য বা সীমাবদ্ধ সামগ্রী থাকলে জেরার মুখে পড়তে হবে।
ফ্রান্স: সন্ত্রাস ও নাগরিক অস্থিরতা বাড়ছে
২০২৫ সালের নতুন ট্রাভেল অ্যাডভাইজরিতে ফ্রান্সকে উচ্চ ঝুঁকির অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্যারিস, লিয়োঁ, নিস পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হঠাৎ হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না নিরাপত্তা সংস্থা। বড় ইভেন্ট, গির্জা, স্টেডিয়াম, ট্রান্সপোর্ট হাবকে ‘সেনসিটিভ স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বেলজিয়াম: আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কারণে বাড়তি টার্গেট ঝুঁকি
ইইউ ও ন্যাটো সদর দফতর থাকায় ব্রাসেলস আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্যে থাকে। ২০২৩ সালে সুইডিশ ফুটবল ভক্তদের ওপর হামলার পর দেশটির নিরাপত্তা স্তর আরও বাড়ানো হয়েছে।
সুইডেন: ইউরোপের শান্ততম দেশ থেকে আতঙ্কের শহর
সুইডেনে অবৈধ অভিবাসন, সংগঠিত অপরাধ চক্র এবং রাজনৈতিক চরমপন্থার বিস্তারের কারণে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একদা নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিচিত সুইডেন এখন বাসিন্দাদের চোখে ‘আতঙ্কের দেশ’।
মালমোতে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগ। প্রতিদিন গ্যাংওয়ার, দাঙ্গা, বোমাবাজি ও গুলি চলার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শহরের বহু অংশ এখন অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে। মিডিয়া ও সরকার পরিস্থিতি ‘সফট পেডেল’ করছে বলে ক্ষোভ।
চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান: গত ২–৩ বছরে বোমা বিস্ফোরণ বৃদ্ধি ৪৫০% থেকে ৫৩০০% পর্যন্ত বলে দাবি। বিভিন্ন স্থানীয় রিপোর্টে ১৫ বছরের নিচে ৫৪ জন নাবালক জড়িত বোমাবাজিতে। গত পাঁচ বছরে ৫০০+ বোমা বিস্ফোরণ। বছরে গুলিবর্ষণে মৃত্যু ৪৪ জন। ধর্ষণের হার বেড়েছে ২৩০০%। নাগরিক সমাজে তীব্র উদ্বেগ। দেশজুড়ে অন্তত ৫৯–৬৫টি অঞ্চলকে ‘নো-গো জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, “সূর্যাস্তের পর শহরের ৬০টির বেশি এলাকায় ঢুকতে ভয় লাগে। বেঁচে ফিরব কি না নিশ্চিত নই।”
ইলন মাস্কের সতর্কবার্তা: ‘মার্কিন পর্যটকদের সুইডেনে না যাওয়াই ভালো’
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কও সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিন পর্যটকদের সুইডেনে ভ্রমণে সতর্ক থাকতে বলেছেন। মাস্কের বক্তব্য বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে।
অভিবাসন নীতি ও ইসলামি চরমপন্থা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষস্তর স্বীকার করেছে, ‘লোন উলফ’ হামলা অত্যন্ত সম্ভাব্য। মালমোতেই ১৮৭টি দেশের মানুষের বসবাস, যার মধ্যে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লেবানন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা বেশি।
অনেক সুইডিশ নাগরিকের অভিযোগ, অবৈধ অভিবাসীরা অপরাধ বাড়াচ্ছে। চরমপন্থার বিস্তার ঘটছে। স্থানীয় সুইডিশরা এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছেন। স্কুলে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষক সুইডিশ ভাষায় কথা বলেন না।
ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
জার্মানির নতুন ভ্রমণ সতর্কতা ইঙ্গিত দিচ্ছে 2025-26 সালের ইউরোপীয় পর্যটন মৌসুম কঠোর নিরাপত্তা নীতির মধ্যে দিয়ে যাবে।
পর্যটকদের জন্য পরামর্শ: পাসপোর্ট/আইডি নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলা। স্থানীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা নিয়মিত চেক করা। রাতের পর উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় না যাওয়া। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সতর্ক থাকা। তথ্যসূত্র: ট্রাভেল & ট্যুর ওয়ার্ল্ড


