ইসলামে গান-বাজনা হারাম, মৌলবাদীদের আপত্তি থাকায় বাংলাদেশের স্কুলে সঙ্গীত ও PT শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্প্রতি গৃহীত একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শারীরিক শিক্ষা’ ও ‘সংগীত’ বিষয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ বাতিল করেছে। মৌলবাদী সংগঠনগুলোর তীব্র বিরোধিতার মুখে এই সিদ্ধান্তে সরকারের নতি স্বীকারের অভিযোগ উঠেছে।
মৌলবাদীদের চাপে নতি স্বীকার?
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে মোট চারটি পদ রাখা হয়েছিল—
১. প্রধান শিক্ষক
২. সহকারী শিক্ষক
৩. সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা)
৪. সহকারী শিক্ষক (সংগীত)
কিন্তু সর্বশেষ সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে কেবল দুটি পদ রাখা হয়— প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক। শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত বিষয়ে আলাদা পদ বাতিল করা হয়।
বিক্ষোভ ও দাবির চাপ
সরকারের এই সিদ্ধান্ত আসে একাধিক মৌলবাদী সংগঠনের প্রতিবাদের পর।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ করে, যেখানে তারা ধর্মীয় শিক্ষকদের নিয়োগের দাবি জানায়।
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা বলেন— “গানের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আদর্শ নষ্ট করা হচ্ছে। সংগীত নয়, দরকার ধর্মীয় শিক্ষার।”
মৌলবাদী শক্তির পুনরুত্থান?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ঘটনা বাংলাদেশের সমাজে উগ্রবাদী চাপের পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক ও সংস্কৃতিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে সরকার বারবার ধর্মীয় গোষ্ঠীর চাপে নীতি পরিবর্তন করছে বলে অভিযোগ।
একজন বিশ্লেষকের ভাষায়, “এটি শুধু শিক্ষানীতির পরিবর্তন নয়, এটি বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার ওপর সরাসরি আঘাত। আফগানিস্তানের তালিবান-ধাঁচের মনোভাব সমাজে ধীরে ধীরে জায়গা নিচ্ছে।”
ইউনূসের নীরবতা ও সমাজের উদ্বেগ
এই পরিস্থিতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের হুমকির পর থেকে তিনি প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন— “যখন মানবতার কণ্ঠরাও নীরব, তখন সমাজ ভয় পেতে শুরু করে।”
সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা— আধুনিক শিক্ষার অপরিহার্য অংশ
শিক্ষাবিদরা বলছেন, সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে অপরিহার্য। এই বিষয়গুলো বাদ দিলে প্রাথমিক শিক্ষার ভারসাম্য নষ্ট হবে।
ঢাকার এক শিক্ষক মন্তব্য করেছেন, “ধর্ম শেখানো ভালো, কিন্তু তার নামে শিল্প-সংস্কৃতিকে গলা টিপে মারার চেষ্টা হলে সেটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে।” সমকাল


