সরকার বিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ পাক অধিকৃত কাশ্মীর, নিহত ১২, আহত ৫০
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ রক্তাক্ত রূপ নিয়েছে। গত চার দিনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই আন্দোলনে ইতিমধ্যেই অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৩ জন পুলিশকর্মীও রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাকিস্তানি সেনারা দাদিয়াল, মুজাফফরাবাদ, রাওয়ালাকোট, নীলম ভ্যালি ও কোটলিসহ একাধিক এলাকায় ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করছে।
চারদিন ধরে অচল জনজীবন
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে জম্মু কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি (AAC)। সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ৩৮ দফা দাবি তুলে আন্দোলনে নামে স্থানীয়রা। তাদের মূল দাবির মধ্যে রয়েছে— পাকিস্তানে বসবাসকারী শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ১২টি বিধানসভা আসন বাতিল, ময়দা ও বিদ্যুতের উপর ভর্তুকি প্রদান, কর ছাড়, এবং অসমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত সম্পূর্ণ করা।
কিন্তু সাধারণ দাবিগুলি ধীরে ধীরে রূপ নেয় পাকিস্তানি সেনার বাড়াবাড়ি ও দমননীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে। সূত্র অনুযায়ী, মুজাফফরাবাদে সেনার গুলিতে অন্তত পাঁচ আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। ধীরকোটে একইভাবে আরও পাঁচজন নিহত হন।
দমননীতির অভিযোগ, বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ
পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তান সরকার অতিরিক্ত হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট ও ল্যান্ডলাইন পরিষেবা। এর ফলে সাধারণ মানুষ কার্যত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে বাজার ও ব্যবসায়— চারদিন ধরে সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
উত্তাল রাস্তাঘাট, ভাইরাল ভিডিও
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে কন্টেনার ভেঙে ফেলছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়ছে। ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব থেকেও অতিরিক্ত সেনা এনে বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে পাক সরকার।
সরকারের অবস্থান ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দাবি করেছেন, তার সরকার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযম প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানান। তবে জয়েন্ট আওয়ামি অ্যাকশন কমিটি অভিযোগ করেছে, পাক সেনার ব্রিগেডিয়ার ফইকের নির্দেশেই আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে।
এদিকে, ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টি-র মুখপাত্র নাসির আজিজ সরাসরি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
দীর্ঘদিনের ক্ষোভে ফুঁসছে পিওকে
অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিকাঠামো ও পানীয় জলের অভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। দুর্নীতি, ঘুষ এবং সরকারি অবহেলায় ক্ষুব্ধ জনতা বহুবার বিক্ষোভ করলেও কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি পাকিস্তান সরকার। নীলম ভ্যালি পাবলিক অ্যাকশন কমিটির মুখপাত্র শওকত নওয়াজ মিরের ডাকে সোমবার সমগ্র পিওকে জুড়ে ‘শাটার ডাউন’ ও ‘চাক্কা জ্যাম’ পালিত হয়। এরপরই সেনার দমনপীড়নে শুরু হয় মৃত্যুমিছিল।