Sunday, December 14, 2025
Latestরাজ্য​

মেসির ৭০ ফুট উঁচু মূর্তির পায়ের নিচে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি, ‘বাংলার লজ্জা’ বলছেন নেটিজেনরা

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: শনিবার বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির কলকাতা সফর ঘিরে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। সফরের প্রথম দিনেই মেসি বেছে নিয়েছিলেন ফুটবল-পাগল শহর কলকাতাকে। তবে প্রত্যাশার বিপরীতে সেই সফর শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের বিশৃঙ্খলার চিত্র দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল মেসির গগনচুম্বী মূর্তির পায়ের কাছে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি বিতর্ক। 

কলকাতার ভিআইপি রোডে স্থাপন করা হয়েছে লিওনেল মেসির ৭০ ফুট উঁচু এক বিশাল মূর্তি। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে মাত্র ৪০ দিনে এই মূর্তি তৈরি হয়। শিল্পী মন্টি পালের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয় শিল্পকর্ম। ক্লাবের সভাপতি সুজিত বসুর উদ্যোগেই এই মূর্তির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। শনিবার ভার্চুয়ালি মূর্তি উন্মোচন করেন মেসি নিজে। তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতির জন্য ধন্যবাদ।”

তবে উন্মোচনের পরই শুরু হয় বিতর্ক। মেসির মূর্তির পায়ের কাছে স্থাপন করা হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি। বিষয়টি ঘিরে নেটমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। অনেকেই একে ‘বাঙালির লজ্জা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সমালোচকদের বক্তব্য, যিনি ভারতের ভাবধারাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন, তাঁর মূর্তি এভাবে একটি বিদেশি ক্রীড়াবিদের মূর্তির পায়ের কাছে রাখা অসম্মানজনক।

বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ লিখেছেন, “আমি একজন ফুটবলপ্রেমী হয়ে ফুটবল দুনিয়ার মহাতারকা মেসিকে ভারতে স্বাগত জানাই। একইসাথে লক্ষ লক্ষ ফুটবলপ্রেমীর উন্মাদনাকে সম্মান জানিয়েই বলছি, রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস মেসিকে নিয়ে আজ যে খেলায় মেতেছে তা বাঙালি অস্মিতার উপর সরাসরি আঘাত হানছে। আমরা সকলেই দেখছি মেসির মূর্তি উন্মোচন হচ্ছে, পুজো হচ্ছে। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। অসুবিধার জায়গা হল মেসির চরণতলে রয়েছে বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি। এটাই কি বাংলার ঐতিহ্য? বাঙালি অস্মিতা? এটাই চেয়েছিল বাংলা ও বাঙালি? তৃণমূল আমলে আজ পর্যন্ত কোনও বীর বাঙালির মূর্তি এভাবে উন্মোচিত হয়েছে বলে দেখা যায়নি। সেখানে মেসির হল, আর শুধু তাই নয় সেই মূর্তির পায়ের নিচে স্থান পেল স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি!”

এদিকে, মূর্তি বিতর্কের পাশাপাশি শনিবার শহর কলকাতায় যা ঘটেছে, তা নিয়েও বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছিল, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিওনেল মেসিকে সম্বর্ধনা জানাবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল অভিনেতা শাহরুখ খানেরও। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়।

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জেরে মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক তারকার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। দীর্ঘ সময় যুবভারতীর বাইরে অপেক্ষা করেও স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারেননি শাহরুখ খান। নিরাপত্তাজনিত কারণে তড়িঘড়ি মেসিকে মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই তিনি শহর ছাড়েন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দর্শকদের মধ্যে। বহু মানুষ কষ্টার্জিত টাকা জমিয়ে টিকিট কেটেছিলেন শুধুমাত্র একবার মেসিকে দেখার আশায়। কিন্তু অনেকেই চোখের দেখাটুকুও পাননি। ফলে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা। অভিযোগ নেতা-মন্ত্রীরাই মেসিকে ঘিরে থাকেন। 

এই ঘটনার মূল আয়োজক হিসেবে যাঁর নাম উঠে আসছে, তিনি শতদ্রু দত্ত। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন দর্শক ও ফুটবল অনুরাগীরা। অভিযোগ, গোটা আয়োজনেই হয়েছে বড়সড় আর্থিক অনিয়ম। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হোক।

সবমিলিয়ে, যে সফর কলকাতার ফুটবল ইতিহাসে উৎসব হয়ে থাকার কথা ছিল, তা এখন বিতর্ক, বিশৃঙ্খলা ও প্রশ্নের আবর্তে। দায় কার? উত্তর খুঁজছে শহর।