বায়ুদূষণের কারণে ভারতে প্রতি বছর ১৫ লাখ মানুষের মৃত্যু
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দীপাবলি এলেই ধোঁয়াশায় ঢেকে যায় দিল্লি। সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসে ‘ধোঁয়ায় মৃত্যুপুরী রাজধানী’। তবে সমস্যা শুধু দীপাবলির আতশবাজি নয়, সারা বছর ধরে ভারতজুড়ে ভয়াবহ বায়ুদূষণ চলছে। কেন্দ্র সরকার সংসদে স্বীকার করেছে, বায়ুদূষণের কারণে ঠিক কত মানুষ মারা যাচ্ছে বা কত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, এ নিয়ে কোনও জাতীয় পর্যায়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের গবেষণাগুলো বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা দেখাচ্ছে, ভারতের বায়ুগুণের দ্রুত অবনতি সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে উত্তর ভারতের বড় শহরগুলোতে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।
দিল্লি ও এনসিআর: দূষণের কেন্দ্রবিন্দু
শীত নামলেই দিল্লি-এনসিআর পরিণত হয় ধোঁয়াশার শহরে। রাস্তায় মুখে মাস্ক পরে সাধারণ মানুষ নেমে প্রতিবাদও করছে। নির্মাণকাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, শিল্পাঞ্চলের নির্গমন, ফসল পোড়ানো সব মিলিয়ে বায়ুর মান এতটাই খারাপ যে বহুদিন ধরে রাজধানী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়ে গেছে।
ল্যানসেটের উদ্বেগজনক রিপোর্ট
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ল্যানসেট-এর গবেষণা আরও ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বায়ুদূষণের কারণে ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটে।
সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো PM2.5 নামে পরিচিত সূক্ষ্ম কণা, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে ফুসফুস, হৃদযন্ত্রসহ নানা অঙ্গের গভীর ক্ষতি করে।
দিল্লিতে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ ‘দূষণ’
আরেকটি গবেষণায় উঠে এসেছে আরও কঠিন বাস্তবতা। ২০২৩ সালে দিল্লিতে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৫ শতাংশই বায়ুদূষণের কারণে হয়েছে। অর্থাৎ, দিল্লিতে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এখন আর দুর্ঘটনা বা রোগ নয়; তার চেয়েও বড় হুমকি দূষিত বাতাস।
জাতীয় তথ্য না থাকায় প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ এত বড় জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হলেও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্দিষ্ট তথ্য না থাকা উদ্বেগের। জাতীয় তথ্যভান্ডার না থাকলে নীতি প্রণয়ন, বাজেট বরাদ্দ, স্বাস্থ্য কাঠামো উন্নয়ন সবই পিছিয়ে পড়ে।
সমাধান কোথায়?
পরিবেশবিদদের মতে, শিল্প নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের নির্গমন কমানো, বড় শহরগুলিতে সবুজায়ন বৃদ্ধি, কৃষি ফসল পোড়ানো বন্ধে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি, এগুলো দ্রুত কার্যকর করতে হবে।
দীপাবলি বা শীতের অজুহাত দিয়ে এই বিপদকে আর সাময়িক সমস্যা বলা যাবে না। বায়ুদূষণ এখন ভারতের সবচেয়ে বড় নীরব ঘাতক, যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে জাতীয় নীতির পাশাপাশি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি।


