Sunday, October 12, 2025
Latestরাজ্য​

‘মেয়েদের বেশি রাতে বাইরে যাওয়া উচিত নয়’, দুর্গাপুরে মেডিকেল পড়ুয়া গণধর্ষণ কান্ডে মন্তব্য মমতার

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণ কান্ডে তোলপাড় গোটা রাজ্য। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্তদের কাউকে ছাড়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবিবার উত্তরবঙ্গ সফরে রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছি। ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। কেউ ছাড়া পাবে না।” তবে একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ওই ছাত্রী রাত সাড়ে ১২টায় কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে গেলেন? তাঁর বক্তব্য, “বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজেরও একটা দায়িত্ব আছে। তাদের স্টুডেন্টদের ‘টেক কেয়ার’ করতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের রাতে বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিৎ না।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “বিভিন্ন রাজ্য থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের বলব, রাতে বাইরে বেরোবেন না। পুলিশ তো জানতে পারে না কে কখন বেরোচ্ছে। পুলিশ তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে বসে থাকবে না।” একই সঙ্গে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওড়িশায় তিন সপ্তাহ আগে ৩ জন মেয়েকে সমুদ্রসৈকতে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ওখানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? বাংলায় হলে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “মণিপুর, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশায় এমন ঘটনার পরেও বিজেপি গুরুত্ব দেয় না। সেখানে ধর্ষিতা আদালতে যাওয়ার আগেই রাস্তায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আমরা কোনও ঘটনাকে রেয়াত করি না।”

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সমাজমাধ্যমে লেখেন, “যেখানে মহিলারা নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের আশায় সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ঘরবন্দি থাকতে বলছেন — যা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। এই মন্তব্য প্রমাণ করে তৃণমূল সরকারের নারীর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও দায়বদ্ধতা নেই।”

ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন অঞ্চলে। অভিযোগ, শুক্রবার গভীর রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে বাইরে বেরিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কয়েক জন যুবক তাঁকে প্রথমে হেনস্থা করে, পরে টেনে নিয়ে গিয়ে পাশের জঙ্গলে গণধর্ষণ করে।

রাতেই পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। এক সহপাঠীকে আটক করা হয়েছে এবং তাঁর বয়ানের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। গভীর রাতে আরও ৩ জনকে আটক করে পরে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, আরও কয়েক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদেরও খোঁজ চলছে।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজ্যের নারী নিরাপত্তা, প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব — সবই এখন প্রশ্নের মুখে।