শুল্কযুদ্ধে আমেরিকাকে মোকাবিলায় ভারতকে পাশে চায় চিন
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ কয়েকবার চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছে। তবে এবার সেই সম্পর্কে নতুন মোড় আনতে চাইলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভারত ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-ও একই বার্তা দিয়েছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারত-চিন সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এক মুহূর্ত।
চিনের বার্তা ও ভারত-চিন সম্পর্কের পটভূমি
শি জিনপিং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উদ্দেশে বলেন, “ভারত-চিন সম্পর্কের উন্নতি থেকে স্পষ্ট যে, পারস্পরিক সহযোগিতার রাস্তায় হাঁটাই দুই দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। হাতি ও ড্রাগনের ট্যাঙ্গো নাচই উভয় দেশ ও তার জনগণের জন্য প্রয়োজন।” এই মন্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সাম্প্রতিক অতীতে লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশে চিনা আগ্রাসন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে।
ভারত ও চিনের মধ্যে শত্রুতার সূচনা হয়েছিল ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত বহুবার কূটনৈতিক আলোচনা হয়েছে, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পুরোপুরি উন্নতি সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে ভারত মহাসাগর ও সীমান্ত অঞ্চলে চিনের ক্রমাগত উপস্থিতি ও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা ভারতকে সন্দেহপ্রবণ করে তুলেছে। তবে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি চিনকে ভারতকে কাছে টানার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মার্কিন শুল্কযুদ্ধ ও ভারত-চিন ঘনিষ্ঠতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্কযুদ্ধে ভারতকে পাশে চায়। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বেড়েছে। ফলে চিনের কূটনৈতিক পরিকল্পনায় ভারতকে পাশে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতেই ভারত ও চিনের মধ্যে নতুন সমীকরণের সন্ধান করছেন শি জিনপিং।
চিনের বিদেশমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যও এই বার্তারই প্রতিফলন। তিনি জানান, “গত বছর ভারত ও চিন সীমান্ত সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক আলোচনা করেছে। রাশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শি জিনপিং-এর বৈঠকে সেই সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দুই দেশই নিজ নিজ অবস্থান থেকে যৌথ পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে সীমান্ত সংঘাত অনেকটাই কমেছে।”
ভারত-চিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
ভারত-চিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। একদিকে, সীমান্তে চিনের ক্রমাগত আগ্রাসন ও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের মিত্রতা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক। অন্যদিকে, বাণিজ্য ও কৌশলগত স্বার্থে চিন ভারতকে পাশে চাইছে। শি জিনপিং-এর সাম্প্রতিক বার্তা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।