এত পশু পাখি থাকতে কেন পেঁচাই মা লক্ষ্মীর বাহন?
নিশাচর পাখি লক্ষ্মীপেঁচা। দেবী লক্ষ্মীর বাহন হচ্ছে লক্ষ্মীপেঁচা। লক্ষ্মী হলো ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী। তাই অনেক গৃহস্থ ঘরে লক্ষ্মীপেঁচা ঢুকলে যেন উড়ে না যায় সে চেষ্টা করেন। তাদের বিশ্বাস, ঘরে লক্ষ্মীপেঁচা থাকলে ধন-সম্পদে পূর্ণ হবে। কিন্তু এত পশু পাখি থাকতে কেন পেঁচাই মা লক্ষ্মীর বাহন? শাস্ত্রকাররা বলছেন পেঁচা নিজেকে গোপন রাখতে ভালোবাসে। একইভাবে জাগতিক বস্তু থেকে সাধন-সম্পদ রক্ষা করতে হয়। না হলে অচিরে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁচাকে তাই অনেকাংশে রূপক হিসেবে দেখানো হয়েছে।
লক্ষ্মী মানে শ্রী, সুরুচি। লক্ষ্মী সম্পদ আর সৌভাগ্যের দেবী। বৈদিক যুগে মহাশক্তি হিসেবে তাকে পূজা করা হতো। তবে পরবর্তীকালে ধনশক্তির মূর্তি নারায়ণের সঙ্গে তাকে জুড়ে দেওয়া হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে লক্ষ্মী পূজা করা হয়। এ উপলক্ষে হিন্দু নারীরা উপবাসব্রত পালন করেন।
পন্ডিতদের মতে, যিনি লক্ষ্মীর সত্ত্বগুণ ঐশ্বর্য, অর্থাত্ সত্য, প্রেম, পবিত্রতা, তপস্যা, ক্ষমা, সেবাভাব, তিতিক্ষা পেতে চান, তাঁকে পেচক-ধর্ম পালন করতে হবে। অর্থাত্, জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে এই যোগৈস্বর্য ও সাধন-সম্পদ রক্ষা করতে হয়। নইলে অচিরে তা নষ্ট হয়ে যায়।
এদিকে পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয়, তখন অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে। গভীর বনে অতি সঙ্গোপনেই পেঁচা বাস করে। সহজে দেখা যায় না। তেমনই পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয়রূপ ব্যক্তি ও বস্তু সব দৈবসম্পদ খেয়ে ফেলে। অপর দিকে জাগতিক ধন, ঐশ্বর্য, মান, যশ যে পায় তাকেও পেঁচার মতো দিন-কানা হয়ে থাকতে হয়।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে দেবী লক্ষ্মী ধনধান্যে ভরিয়ে দিতে ভক্ত গৃহে পূজা নিতে আসেন। প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু রাজা-মহারাজা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহস্থ অব্দি সবাই লক্ষ্মী দেবীকে পূজা দিয়ে আসছেন। বাঙালি হিন্দু বিশ্বাসে লক্ষ্মীদেবী দ্বিভুজা। আর তার বাহন পেঁচা।