সব ধর্মের জন্য একই আইন, উত্তরাখণ্ডে কার্যকর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: উত্তরাখণ্ডে সোমবার থেকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হয়েছে। এই নতুন আইনের মাধ্যমে রাজ্যের সব ধর্মের মানুষের জন্য বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ ও দত্তক নেওয়ার মতো ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়ে একই আইন প্রযোজ্য হবে। এর ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক পার্সোনাল ল বা পারিবারিক আইনের প্রয়োগ বন্ধ হবে। তবে তফসিলি উপজাতিদের এই আইনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
এই আইন কার্যকরের পর থেকেই রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেস, জনতা দল (ইউনাইটেড), সমাজবাদী পার্টি (এসপি) এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) সহ বেশ কিছু বিরোধী দল এই আইনের বিরোধিতা করেছে। এআইএমআইএম-এর প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করেছেন যে মুসলমানদের লক্ষ্য করেই এই আইন চালু করা হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডও এর আগেই এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করে জানিয়েছিল যে সংখ্যাগরিষ্ঠের নৈতিকতার মাপকাঠিতে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না।
জামায়তে উলেমা-এ-হিন্দ এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের আইনজীবীরা এই আইনের সাংবিধানিক ও আইনি দিকগুলো পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
নতুন আইনের মূল বৈশিষ্ট্য:
– সব ধর্মের মানুষের জন্য বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক নেওয়ার মতো বিষয়ে একই আইন প্রযোজ্য হবে।
– কন্যা সন্তানরা সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাবেন।
– তিন তালাক, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
– ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ে করা যাবে, তবে বিয়ের পর তা নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
– বিয়ের জন্য ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে: ছেলেদের জন্য ২১ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর।
– এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে নিষিদ্ধ।
– বিবাহবিচ্ছেদ ও লিভ-ইন সম্পর্ক নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
– লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দেওয়া বা নিয়ম না মানলে তিন মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
– ২১ বছরের নিচে যুগল একত্রে বসবাস করতে চাইলে অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন।
– বিয়ে না করে একত্রে বসবাসকারী যুগলের সন্তানরা সমস্ত অধিকার পাবে।
এই আইন উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দাদের জন্য প্রযোজ্য হবে, এমনকি যারা রাজ্যের বাইরে বসবাস করছেন তাদের ক্ষেত্রেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপির কাছে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি একটি ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে কাজ করতে পারে।
এই আইন কার্যকরের মাধ্যমে উত্তরাখণ্ডে আইনি সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তবে তা নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক এখনও চলমান।