Monday, November 17, 2025
সম্পাদকীয়

বীরভূমের গ্রাম থেকে ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি, এক নজরে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনী

কলকাতা: সোমবার প্রয়াত হলেন ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর বীরভূমের মিরাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাবা কামদাকিঙ্কর ছিলেন সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী।

স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। শিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কলকাতায় ডাক বিভাগের কারণিক পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৬৩ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ‘দেশের ডাক’ নামে একটি সংবাদপত্রে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন তিনি।

রাজনীতিতে প্রণববাবুর উত্থান হয়েছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। ১৯৬৯ সালে মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনে তাঁর রণনীতিতে জয়লাভ করে নির্দল প্রার্থী। এতেই ইন্দিরা গান্ধীর নজরে পড়েন তিনি। প্রণববাবুকে দলে টেনে নেন ইন্দিরা। সেই বছরই রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এর পরও ৪ বার রাজ্যসভার সাংসদ হন তিনি।

সংসদীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েই ইন্দিরা গান্ধীর বিশ্বস্ত সৈনিকে পরিণত হন প্রণব। ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিসভায় জায়গা পান তিনি। তাঁকে শিল্পোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরলে অর্থমন্ত্রী হন প্রণববাবু। ১৯৮০ সালে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হন প্রণববাবু।

ইন্দিরাগান্ধীর হত্যার পর কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয় প্রণব বাবুকে। সেই সময় রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। তবে তা তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। ১৯৮৯ সালে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর হত্যার পর কংগ্রেসে ফের সক্রিয় হন প্রণব। তখন তাঁকে প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও। নরসিংহ রায়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান তিনি।

১৯৮৫ সালে প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন প্রণববাবু। ২০০০ সালে তাঁকে ফের এই পদ গ্রহণ করতে হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। যদিও কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে রাজ্যের রাজনীতিতে উৎসাহ ছিল না প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর মন পড়ে থাকত দিল্লিতে।

২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আসন থেকে জিতে প্রথমবার লোকসভায় যান প্রণব মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে ঘোষণা করলে প্রণববাবুর নাম নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়। যদিও শেষ মুহূর্তে মনমোহন সিংয়ের নাম ঘোষণা করেন সোনিয়া গান্ধী।

২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি পদের জন্যেও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে জোর আলোচনা হয়। কিন্তু তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যহতি দিতে রাজি ছিলেন না মনমোহন সিং। ফলে সেযাত্রায় রাষ্ট্রপতি হওয়া হয়নি তাঁর। মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় অর্থ, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

২০১২ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা করেন প্রণব। এর পর কংগ্রেসের তরফে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়। ২০১২ সালের ২৫ জুলাই প্রথম বাঙালি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালে পদ্ম বিভূষণ এবং ২০১৯ সালে ভারতরত্নে ভূষিত করা হয় তাঁকে। পাঁচ দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও কখনও দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে।