Saturday, May 17, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিতে উত্তাল নেপাল, কারফিউ জারি

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: নেপালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে কাঠমান্ডু। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর তিনকুনে এলাকায় রাজতন্ত্রপন্থীদের বিশাল সমাবেশ সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।

রাজতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ

শুক্রবার হাজার হাজার রাজতন্ত্রপন্থী সমর্থক কাঠমান্ডুর তিনকুনেতে একত্রিত হয়ে রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি জানায়। ‘রাজা আও দেশ বাঁচাও’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার নিপাত যাক’, ‘আমরা রাজতন্ত্রে ফিরতে চাই’—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশ।

সমাবেশ চলাকালীন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজতন্ত্রপন্থীরা এগিয়ে যেতে চাইলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাধা দেয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা উগ্র হয়ে ওঠে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন আন্দোলনকারীরা ক্ষমতাসীন সিপিএন (ইউএমএল)-এর অফিসে হামলা চালায়। আলোকনগরে অবস্থিত ওই দপ্তরে ভাঙচুর চালানো হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়া, প্যারিসডান্ডায় অবস্থিত সিপিএন-মাওবাদী সেন্টারের কার্যালয়েও হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়।

সরকারের পদক্ষেপ ও কারফিউ ঘোষণা

বিক্ষোভকারীদের সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে তিনকুনে, সিনামঙ্গল এবং কোটেশ্বর এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক, পুলিশের ডিজি দীপক থাপা এবং কাঠমান্ডুর প্রধান জেলা আধিকারিক ঋষি রাম তিওয়ারির উপস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন, পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের একজন গুরুতর আহত হন। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং জলকামান ব্যবহারের পরও উত্তেজনা প্রশমিত না হওয়ায় কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রজাতন্ত্রপন্থীদের পাল্টা সমাবেশ

অন্যদিকে, কাঠমান্ডুর ভৃকুটিমন্ডপ এলাকায় প্রজাতন্ত্রপন্থীদের একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক’, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’, এবং ‘রাজতন্ত্র নিপাত যাক’—এই ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের। এই সমাবেশে সিপিএন-মাওবাদী সেন্টার, সিপিএন-ইউনিফাইড সোশ্যালিস্টসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল প্রচণ্ড এবং অন্যান্য মাওবাদী নেতা।

পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ

নেপালে রাজতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। এর আগে, ১৯ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্র দিবসে প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ এক ভিডিয়ো বার্তায় সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, যার পর থেকেই এই আন্দোলন তীব্র রূপ নিতে শুরু করে। দেশজুড়ে পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ, এবং সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।