Monday, May 19, 2025
দেশ

সাড়ে ১২ বিঘা জমি দখল, স্বামীকে হত্যা! ৭ বার পরিবারের উপর হামলা, ৩৩ বছর ধরে আতিকের বিরুদ্ধে লড়ছেন জয়শ্রী

কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: এই মুহূর্তে গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। শনিবার রাতে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে পুলিশের ঘেরাটোপের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে গ্যাংস্টার আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরফের। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে যোগী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। এরমধ্যেই আতিক আহমেদের নৃশংসতার কাহিনী সামনে এলো।

আতিক আহমেদ জয় শ্রী কুশওয়াহার সাড়ে ১২ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করেন। জয়শ্রী এর বিরোধিতা করলে তিনি তার স্বামীকে রাতারাতি উধাও করে দেন। তার ভাই প্রহ্লাদ কুশওয়াহাকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে খুন করে বলে অভিযোগ। ছেলের ওপর হামলা চালানো হয় এবং বাড়িতে ঢুকে তার পরিবারকে কয়েকবার মারধর করা হয়। ভুক্তভোগী ওই মহিলার নাম সুরজকলি কুশওয়াহা ওরফে জয়শ্রী।

এর পরেও জয়শ্রী কুশওয়াহা দমে যাননি। তিনি ৩৩ বছর ধরে আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়ছেন। হয়তো তিনি এই আশায় আছেন যে একদিন আতিকের সন্ত্রাসের অবসান হবে এবং তিনি ন্যায়বিচার পাবেন। অবশেষে শনিবার আতিক ও তার ভাই আশরাফকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জয়শ্রী আইনগত বিচার পাননি, কিন্তু মাফিয়াদের শেষ পরিণতি দেখতে পেরেছেন।

ব্রিজমোহন ওরফে বাচা কুশওয়াহা ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ

জয়শ্রী কুশওয়াহার স্বামী নিখোঁজ গত ১৫ বছর ধরে। আইনে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকে তবে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রয়াগরাজের ধুমানগঞ্জ এলাকার ঝালওয়ায় বাসিন্দা জয়শ্রীর স্বামী ব্রিজমোহন কুশওয়াহার ১২ বিঘার বেশি জমি ছিল। এর ওপর চাষাবাদ করা হতো, যার কারণে সংসার চলে। কিন্তু একদিন সব বদলে গেল। জয়শ্রীদের জমি দখল করে নেয় আতিক।

সমবায় সমিতির নামে নিবন্ধিত জমি

সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপকালে জয়শ্রী বলেন, আতিকের ঘনিষ্ঠ হিসাবরক্ষক একদিন তার কাছে এসে জানান, আপনার জমি শিবকোটি সমবায় হাউজিং সোসাইটির নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। আতিক দুইজনকে সচিব করে এ জমি বিক্রি করে দেন।

জয়শ্রী জানান, তিনি প্রতিবাদ করলে আতিক তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকে। জমি দখল করা দেখে জয়শ্রী গ্রামবাসীর সাহায্য চেয়েছিলেন এবং তার জমি ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন।

৩০ বছরে ৭ বার হামলার শিকার

জয়শ্রী জানান যে, আতিক তাকে তার অফিসে ডেকে বিষয়টি শান্ত করতে বলে। কিন্তু তিনি আতিকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর আতিকের অনুগামীরা বেশ কয়েকবার বাড়িতে ঢুকে তাকে লাঞ্ছিত করে। তার দোসররা তাকে হুমকি দিতে থাকে। জয়শ্রী দমে না পেয়ে আতিকের লড়তে থাকেন।

জয় শ্রী তার ভাই প্রহ্লাদ কুশওয়াহার বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর জন্য আতিক আহমেদকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন যে, গত ৩০ বছরে তার উপর ৭ বার হামলা হয়েছে। ২০১৬ সালে, তার বাড়ির সামনে তার ছেলে এবং পরিবারের উপর হামলা হয়েছিল। এতে তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়। তবে ছেলের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

প্রথমবারের মতো নথিভুক্ত এফআইআর

জয়শ্রী বহু বছর ধরে আদালত ও থানায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন। কিন্তু আতিকের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো শুনানি হয়নি। এমনকি থানায় এফআইআরও লেখা হচ্ছিল না। ১৯৯১ সালে, তিনি আতিকের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর দায়ের করতে সফল হন। তবে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে ২০০১ সালে মামলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র: Patrika

OP India