এক সময়ের ভিক্ষুকের এখন ৮০০ গাড়ি, ৩৮ কোটির ব্যবসা
ভিক্ষা করেই একসময় পেট চলত, বর্তমানে তিনি ৩৮ কোটি টাকার মালিক, রয়েছে ৮০০ গাড়ি। এখন হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি পরিষেবা সংস্থাটি তাঁর। তবে রেনুকা আরাধ্যর স্বপ্ন আরও বড়। তিনি জানান, সংসার চালাতে কি না করেছি! ভিক্ষা করেছি, থালাবাসন ধুয়েছি, নাইটগার্ড হয়েছি। কখনও মালির কাজ করে সংসার চালিয়েছি। অন্যের গাছের নারিকেল পেড়ে দিয়েও সংসার চালিয়েছি। ব্যবসাকে আরও বড় করতে চান তিনি। তাঁর লক্ষ্য টার্নওভার ১০০ কোটি করার।
বেঙ্গালুরুর আনেকাল তালুকের মাঝে একটা ছোট গ্রাম গোপাসান্দ্রাের এক ব্রাক্ষ্ণণ পরিবারে জন্ম রেনুকা আরাধ্যর। বাবা পুরোহিত ছিলেন। কিন্তু রোজ কাজ পেতেন না। তাই সংসার চালাতে মাঝেমধ্যেই তাঁকে ভিক্ষা করতে বেরোতে হত। ১২ বছর বয়সে আরাধ্যকে তার বাবা একটি বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে পাঠান। সেখানে থালাবাসন ধোয়া, বাজার করা থেকে শুরু করে গবাদি পশুর দেখাশোনা করতেন তিনি।
এসবের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকলেন আরাধ্য। বাবা মারা গেলে ১৫ বছর বয়সে সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে আরাধ্যের কাঁধে। সেই বাড়ির কাজ ছেড়ে একটি লেদ কারখানায় কাজ নেন। তারপর একটা প্লাস্টিক কারখানায় যোগ দেন। কিন্তু সেই উপার্জন দিয়ে এতোবড় সংসার চালানো যথেষ্ট ছিল না। তাই একইসঙ্গে রাতে নিরাপক্ষারক্ষীর কাজ নেন তিনি।
এরইমধ্যে একটি ছাপাখানায় ঝাড়ুদারের কাজ পান আরাধ্য। সেখানে তার সততা ও কাজে আগ্রহ দেখে ছাপাখানার মালিক তাকে কম্পিউটারে টাইপ, হিসেব করা ও ডিজাইন করা শেখান। এরপর একটি সংস্থার সেলসম্যান হন তিনি।
২০ বছর বয়সে তার পুষ্পা নামে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাকেই বিয়ে করেন আরাধ্য। এরপর কখনও কাপড়ের দোকান, কখনও মালির কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। গাছ বেয়ে উঠে নারকেল পেড়েও সংসার চালিয়েছেন। সেই সময় তার মাসে আয় ছিল মাত্র ৬০০ রুপি। সেলসম্যান থাকা অবস্থায় সতীশ রেড্ডি নামে এক গাড়ি চালকের সঙ্গে পরিচয় হয় আরাধ্যের। বলতে গেলে এরপর থেকেই তার ভাগ্য বদলে যায়।
সতীশ থেকে গাড়ি চালানো শিখে মৃতদেহ বহনকারী গাড়ির চালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। চার বছরে কিছু টাকা জমান তিনি। এরপর ২০০৬ সালে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাড়ি কেনেন আরাধ্য। কঠোর পরিশ্রমের পর আরও ৬টি গাড়ি কেনেন তিনি। দিনে দিনে ব্যবসা বড় হতে থাকে তার। এভাবেই আজ ৮০০ গাড়ির মালিক তিনি। জীবনের সকল স্তরেই সৎ থেকেছেন। রেনুকা বলেন, বড় স্বপ্ন দেখুন, ঝুঁকি নিন। জীবনের সব পথেই সৎ থাকুন।