Saturday, June 21, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

নুসরাত হত্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সহ ১৬ জনকে ফাঁসির আদেশ

ঢাকা: মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নৃশংসভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন নুসরত জাহানকে। মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে জ্যান্ত তাঁকে পুড়িয়ে মারে দুষ্কৃতীরা! এই ভয়ানক হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের একটি আদালত মোট ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল। প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এই নৃশংস ঘটনার মূল অভিযুক্ত সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলাও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন। ফেনী মহিলা ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এই রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় ১৬ জন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সকলেই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা একজন পিয়নের মাধ্যমে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। নুসরাত অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে তার ওপর যৌন হয়রানি করে অধ্যক্ষ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার  সোনাগাজী থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে।

এরপর গত ৬ এপ্রিল নুসরাত পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যায়। তাঁকে নানা কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। মাদ্রাসার ছাদে আগে থেকে বোরকা পরা চারজন অপেক্ষায় ছিলেন। নুসরাত মাদ্রাসার ছাদে ওঠার পর দুর্বৃত্তরা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতের মায়ের দায়ের করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। এতে নুসরাত রাজী না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা পাঁচজন তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে হাত ও পায়ের বাধন পুড়ে খুলে গেলে নুসরাত দৌড়ে নিচে নামতে থাকে। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।

এই ঘটনাটি নাড়িয়ে দেয় গোটা বাংলাদেশকে। দেশ জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ, আন্দোলন। পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিকেই বিচারের আওতায় আনা হবে।