বাংলাদেশের সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য ৪২টি আসন সংরক্ষণের দাবি হিন্দু মহাজোটের
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য ৪২টি আসন সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে হিন্দু মহাজোট।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু, যার মধ্যে ১০ শতাংশ হিন্দু এবং বাকি ২ শতাংশ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। তাই জাতীয় সংসদের ৩৫০টি আসনের মধ্যে অন্তত ৪২টি আসন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত।
এই ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৮টি হিন্দুদের জন্য, ৩টি বৌদ্ধদের জন্য এবং ১টি খ্রিস্টানদের জন্য বরাদ্দ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৬টি আসনের মধ্যে ৪টি হিন্দু নারীদের এবং ২টি বৌদ্ধ নারীদের জন্য নির্ধারণ করার দাবি জানানো হয়েছে। এই নারীরা হিন্দু, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন বলে তিনি জানান।
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক আরও বলেন, দেশে ভোটের অনুপাত অনুযায়ী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের জন্য সংসদীয় আসন বরাদ্দ হওয়া উচিত। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমান মর্যাদা থাকা উচিত এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন, যা সবার জন্য ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে।
তিনি অভিযোগ করেন যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার ১২% হলেও, তারা সংসদে তাদের প্রাপ্য ৪২টি আসন কখনও পায়নি।
বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে হিন্দু সম্প্রদায় যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, অতীতে বিএনপি থেকে মাত্র একজন, জাতীয় পার্টি থেকে ২-৩ জন এবং আওয়ামী লীগ থেকে ৬-১৫ জন পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার, জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গোবিন্দ প্রামাণিক আরও বলেন, “বর্তমান সরকার দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত, উদার এবং নিঃস্বার্থ মানুষের সমন্বয়ে গঠিত। আমরা আশা করি সরকার, সংস্কার কমিটি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একসঙ্গে কাজ করে একটি প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নত করবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবিগুলি মেনে না নেয়, তবে হিন্দু সম্প্রদায় কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং ভোটকেন্দ্রে যাবে না।”