আরব বিশ্বে কাশ্মীরের চেয়ে ভারতের গুরুত্ব অনেক বেশি
রিয়াদ: ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর সারা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে। পাকিস্তান এই ইস্যুতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে। পাকিস্তান আশা করেছিল, মুসলিম বিশ্ব এই ইস্যুতে সোচ্চার হবে এবং কাশ্মীরিদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুলবে। কিন্তু সেটা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং আরব বিশ্ব কাশ্মীরের চেয়ে ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে।
কাশ্মীরকে বিবেচনা করা হতো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয় হিসেবে। তবে বিষয়টি নিয়ে যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলো তখন কাশ্মীরিদের অনেকেই আশা করেছিলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থায় এর সমাধান হবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলে সেখানে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। কেবল তাই নয়, তাকে দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাও দেওয়া হয়েছে। আর আবুধাবিকে নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
সৌদি আরবে ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিক তালমিজ আহমেদ বলেন, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো মূলত কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলে মনে করে। এটাই তাদের সামগ্রিক ধারণা। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ভারতের অভ্যন্তরীণ ও সাংবিধানিক বিষয় বলেও তাঁরা মনে করেন। একই ব্যাখ্যা দিয়ে ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ফজলুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন বাস্তবতাবাদের যুগে প্রবেশ করেছে। নীতি নৈতিকতার যুগ এখন আর নেই। তাঁর মতে, আমেরিকা কিংবা ইউরোপের দিকে তাকালেও একই বিষয় দেখা যাবে। সেখানেও আঞ্চলিক রাজনীতি ও নিজস্ব বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে।
ফজলুর রহমান আরও বলেন, ভারতের বিষয়ে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি গত আট দশ বছরে আমূল বদলে গেছে। তালমিজ বলেন, ভারতের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্কে বড়ো ধরনের পরিবর্তন আসে ২০০১ সালে যখন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন। তালমিজ আহমেদ সেসময় সৌদি আরবে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় আরব বিশ্বের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হয়।
তালমিজ আহমেদ জানান, এরপর থেকে সৌদি আরব ও ভারতের মধ্যে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয় যাতে বলা হয় যে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। ২০০৬ সালে এই সম্পর্ক আরো উষ্ণ হয় যখন ভারত তার প্রজাতন্ত্র দিবসে সুলতান আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। গত বছর সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনও ভারত সফর করেন।
তালমিজ আহমেদ জানান, ভারত ও আরব বিশ্বের মধ্যে সম্পর্কে প্রথম দিকে জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পর এটি বদলে যায় এবং রিয়াদ ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশিদারিত্বের কথা ঘোষণা করে। এরপর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আরব বিশ্বের সম্পর্ক দুর্বল হতে শুরু করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তালমিজ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আসলে এভাবে কাজ করে না যে একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হলে আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাবে।