Sunday, June 22, 2025
Latestআন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের ভোলায় হিন্দু পল্লীতে উত্তেজিত মুসলিমদের ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ

ঢাকা: ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত রবিবার বাংলাদেশের ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিনের ঈদগা মাঠে সমাবেশ ডেকেছিল ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ওই সমাবেশে নিহত হয়েছিলেন ৪জন। এক হিন্দু তরুণের ফেইবুক আইডি হ্যাক করে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট ছড়ানোর এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।

সমাবেশে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হলেও অনেকটা আড়ালে থেকে যায় ওই সংঘর্ষের পর পাশের হিন্দু পল্লীতে উত্তেজিত মুসলিমদের ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সমাবেশে সংঘর্ষে পর সংঘর্ষস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রবীন্দ্র পল্লীতে (ভাওয়াল বাড়ী) হিন্দুদের একটি মন্দির ও ৯টি বাড়িতে ভাংচুর চালায় মুসল্লিরা।

সেদিন যেভাবে দলবেঁধে হিন্দু বাড়ি-মন্দিরে হামলা যে ভীতি ছড়িয়েছিল, তা থেকে এখনও বের হতে পারেননি আক্রান্তরা।আক্রান্ত আভা রাণী দাস জানান, ঈদগা মাঠে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবরে দশ্চিন্তায় পড়েছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে তা কল্পনাও করিনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই একদল লোক চলে আসে আমাদের পাড়ায়। তিনি জানান, গেটের বাইরে তালা দিয়ে ঘরের ভেতরে আশ্রয় নেন তিনি সহ তাঁর পরিবারের ৬-৭ সদস্য। ভেতরে তাঁরা আছে, তা যেন কেউ বুঝতে না পারে সেজন্য ঘরের সব লাইট-ফ্যান বন্ধ রাখা হয়।

ষাটোর্ধ্ব আভা রাণী দাস জানান, ঘরের পাশের মন্দিরে প্রতিমা সহ আসবাবপত্র তছনছ করে হিন্দুদের বাড়ির দিকে চলে যায় আক্রমণকারীরা। তাঁদের ঘরের জানালা ভেঙে অন্য বাড়ির দিকে চলে যায় তারা। তিনি জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকশো লোক আসে। মন্দিরের ঠাকুর আর সব জিনিস ভাঙতে থাকে। এরপর আমাদের ঘরে এসে জানালার থাই গ্লাস ভেঙে চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে, এই ঘরে কেউ নেই চল। পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে বেশি শঙ্কায় ছিলেন বলে তিনি জানান।

হিন্দু বাড়িতে ভাংচুর চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আক্রমণকারীরা, ফেরার পথে আগুনও দেওয়া হয়। আরেকটি বাড়ির সামনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরসাইকেল। স্থানীয়রা জানান, রবীন্দ্র পল্লীতে প্রায় ৪০টি পরিবারের বাস। ৩৫টি হিন্দু বাড়ির ফাঁকে ফাঁকে বাকিগুলো মুসলিমদের।

ভাওয়াল বাড়ি শ্রী শ্রী গৌর নিতাই আশ্রমের সভাপতি সত্য প্রসাদ দাস জানান, রবিবার দুপুরের দিকে একদল সন্ত্রাসী এসে মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ভাংচুর করে, আসবাব ভাংচুর করে এবং হিন্দু পল্লীর বাড়ি-ঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আমি একজন বুড়ো মানুষ, তবুও তারা আমাকে মারধর করেছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচার হোক এবং আমাদের ক্ষতিপূরণ হোক বলে তিনি জানান।

এ ঘটনায় ৪০০-৫০০ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামির করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বোরহানউদ্দিন থানার ওসি ম. এনামুল হক বলেন, হিন্দু বাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা অপরাধীদের খুঁজে বের করে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।