শিক্ষকতার জন্য মার্কিন মুলুকে পুরস্কার পেলেন ‘সুপার ৩০’-খ্যাত আনন্দ কুমার
ওয়াশিংটন: ‘সুপার ৩০’-র প্রতিষ্ঠাতা ও বিখ্যাত গণিতজ্ঞ বিহারের আনন্দ কুমারের নামের সাথে আজ পরিচিত গোটা দেশই। তাঁর জীবন যুদ্ধের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে হৃত্বিক রোশন অভিনীত ছবি ‘সুপার ৩০’। এবার ৪৬ বছরের আনন্দ কুমারকে ‘দ্য এডুকেশন এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ দিল ‘ফাউন্ডেশন ফর এক্সেলেন্স’ নামের মার্কিন সংস্থা। ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোস সংস্থার ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার আনন্দ কুমারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
পুরস্কার গ্রহণ করে আনন্দ কুমার বলেন, শিক্ষাই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করতে। সঠিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থাকে জনতার হাতের নাগালে রাখতে পারলে তা এই পৃথিবীতে বিরাট পার্থক্য গড়ে দিতে পারে দারিদ্র, বেকারত্ব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যায় এবং আরও অনেক কিছুতে।

আনন্দ কুমার বলেন, ভারতীয়রা আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্বের ছাপ রাখছে। এবং তাঁদের কাছে এটা সন্তোষজনক যে তাঁরা সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারছেন। শিক্ষার চেয়ে মূল্যবান উপহার আর কিছু হতে পারে না। আনন্দ কুমার আরও বলেন, আজ যখন শূন্যতা বেড়ে চলেছে, তখন শিক্ষাই কেবল সেতু তৈরি করতে পারে। কাউকে সুযোগ দিন। সে ভালো করবেই। আসলে সুযোগটাই সবথেকে জরুরি।
আনন্দ কুমার গত ১৮ বছর ধরে বিনা পয়সায় তাঁর ‘সুপার ৩০’ প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর ৩০ জন ছাত্রকে বিনামূল্যে আইআইটি প্রশিক্ষণ দেন তিনি। তিনি ‘সুপার ৩০’ শুরু করেন ২০০২ সালে। দুঃস্থ পরিবারের মেধাবি ৩০ জন ছাত্রকে বেছে নেন তিনি। ২০০২ সালে শুরুর বছরই তাঁর টিমের ১৮ জন ছাত্র আইআইটিতে সুযোগ পায়। এরপর ২০০৪ সালে ২২ জন, ২০০৫-এ ২৬, ২০০৬-তে ২৮, ২০০৮-এ পুরোপুরি ৩০। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তাঁর ৪৫০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩৯১ জন আইআইটি ক্র্যাক করেছেন। ২০১৮-তে তাঁর ‘সুপার ৩০’-র ২৮ জন সুযোগ পেয়েছেন আইআইটিতে।

বিহারের পাটনার প্রত্যন্ত গ্রামের সরকারি হিন্দি মিডিয়ার স্কুলের কৃতী ছাত্র ছিলেন আনন্দ। বাবার খুবই কম মাইনের কেরানির চাকরি। ১৯৯৫ সালে একই সঙ্গে কেমব্রিজ ও শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ এলেও অর্থাভাবে যেতে পারেননি আনন্দ। বাবার মৃত্যুর পর সংসারে আঁধার নেমে এলেও, হাল ছাড়েননি আনন্দ। জীবকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে পাঁপড় বিক্রি করেছেন তিনি। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল গণিতজ্ঞ হওয়ার। এলাকার মেধাবী ছাত্রদের দিনের পর দিন বিনা পয়সায় টিউশন পড়িয়েছেন তিনি। বিদেশের ম্যাগাজিনে লেখালিখি করতেন তিনি। ‘নম্বর থিওরি’-র উপর তাঁর একাধিক গবেষণা পেপার ছাপা হয় ‘ম্যাথেমেটিকাল স্পেকট্রাম’ ও ‘দ্য ম্যাথেমেটিকাল গেজেট’ পত্রিকায়। তাঁর সেরা কীর্তি ‘সুপার ৩০।’
আনন্দ কুমারের বায়োপিকে অভিনয় করেছিলেন হৃতিক রোশন। ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আনন্দ কুমার বলেন, আমার সামান্য ‘সুপার ৩০’ প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি সাফল্যের হাসি কেমন করে কেবল পরিবার নয়, গোটা জাতির জন্য আশার সঞ্চার করতে পারে। এটাই পৃথিবী চায় এবং আপনার প্রচেষ্টা লক্ষ মানুষের আশাকে জাগিয়ে তুলতে পারে।