জল সংকটে সারা বিশ্ব

ভারতীয় উপমহাদেশে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হারে কমে যাচ্ছে ভূগর্ভের জলের স্তর। যুগে যুগে বিশ্বে জল সংকট বাড়ছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হারে। এর মধ্যে জল সংকটে সবচেয়ে বেশি এখন আফ্রিকার দেশগুলো। সেখানে খরা বাড়ছে। ২০১৫ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে জল সংকটকে বৈশ্বিক হুমকির তালিকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শরণার্থী সংকট ও সাইবার আক্রমনের উপরে স্থান দেয়া হচ্ছে। কানাডার ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস গ্রাহাম কোগলি বলেন, ‘‘ইন্দো-গাঙ্গেয় সমতলে, অর্থাৎ, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় ৬০ কোটি মানুষের বাস, খুবই অনিয়ন্ত্রিত ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ হারে মাটির নিচের জল তুলে ফেলা হচ্ছে।”

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এই বেসিনের ভূ-গর্ভস্থ জলের প্রায় অর্ধেক আবার ব্যবহারের অযোগ্য৷ কারণ, এতে লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি। তাই এগুলো পান করা বা কৃষিকাজে ব্যবহারের অনুপযোগী। ভূ-গর্ভস্থ জল অন্তত বিশ্বের ৫০ ভাগ পান করা ও ৪০ ভাগ কৃষিতে ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেই জল প্রাকৃতিকভাবে মাটির নিচে একই হারে সেসব ভূগর্ভস্থ অ্যাকুইফায়ারে যুক্ত হয় না, যেমনটা বৃষ্টিতে মাটির উপরিভাগের জলাশয়ে ভরাট হয়। তাই ভূ-গর্ভস্থ জলকে আর নবায়নযোগ্য বলা যায় না।

‘দ্য ওয়ার্ল্ডস ওয়াটার’ বইয়ের লেখক পিটার গ্লাইক ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘মানুষ যেভাবে সময়ের আগেই এসব জল ব্যবহার করে ফেলছে, তাতে এই জল এখন অনবায়নযোগ্য হয়ে গেছে৷” বছর জুড়ে বিশ্বের অন্তত ৫০ কোটি মানুষ প্রচণ্ড জল সংকটে ভোগে বলে জানান বিশ্লেষকরা। গবেষণা বলছে, এর মধ্যে তিন জনের এক জনই ভারতে। এছাড়া পাকিস্তান, মিশর, মেক্সিকো, সৌদি আরব ও ইয়েমেনও এই সংকটপূর্ণ দেশের তালিকায় আছে।

ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোয়েকস্ট্রা বলেন, ‘‘এরপর এসব কারণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা।” জলবায়ু বিষয়ক জাতিসংঘের প্যানেলের গবেষণা বলছে, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ জল কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৪০ ভাগ জল সংকট দেখা দেবে। তারওপর এ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে জলের চাহিদা বাড়বে ৫৫ ভাগ। তাই একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এএফপি