Saturday, April 20, 2024
সম্পাদকীয়

সেই ভয়াল 25 মে

সেদিন ছিল 25 মে 2009 মঙ্গলবার। প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে এমন কিছু দূর্যোগঘন মূহূর্ত আসে যার ক্ষত সে কখনই কাটিয়ে উঠতে পারে না। ঠিক তেমনি পারেনি 2009 সালের 25 মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আক্রান্ত মানুষগুলো। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও আইলার নাম শুনলে তারা আতকে ওঠে।

আইলা নামটি দেয় মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা। আইলা শব্দের অর্থ ডলফিন বা শুশুক জাতীয় জলচর প্রানী। 21 মে 2009 তারিখে বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন ঘূর্ণঝড় আইলা 25 মে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আঘাত হানে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় 80-100 কিলোমিটার এবং এর ব্যাস ছিল 300 কিলোমিটার যা 2007 সালের 15 নভেম্বর হয়ে যাওয়া সিডরের চাইতে 50 কিলোমিটার বেশি। সিডরের গতিবেশ ছিল 260 কিলোমিটার প্রতিঘন্টায়। সেজন্যে আইলার ক্ষয়ক্ষতি সিডর থেকে তুলনামূলক অনেক কম হয়েছিল।

ঘূর্ণঝড় আইলা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদেনীপুর, বর্ধমান ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় প্রবলভাবে আঘাত হানে। এই আইলার 149 জনের মহামূল্যবান জীবন কেড়ে নেয় এবং নিখোজ হয় বহু মানুষ। প্রবল জলোচ্ছাসে ও ঝড়ে উপড়ে পড়ে বহু গাছপালা ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। কলকাতা শহরের মানুষের জনজীবন স্তব্দ হয়ে পড়ে। এদিন শতাধিক বেড়িবাধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়। দেড় লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। 50,000 হেক্টর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয় যার তৎকালীন বাজারদর 125 কোটি ভারতীয় রুপি। আইলা ভারতের দুই লক্ষাধিক মানুষকে ব্যস্তুচ্যুত করে।

সর্বনাশা আইলায় বাংলাদেশের 193 জন মারা যায়। আইলা বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালি, লক্ষীপুর, বরিশাল, নোয়াখালি জেলায় প্রবলভাবে আঘাত হানে। আইলার প্রকোপে সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার 711 কিলোমিটার নদীবাধ ভেঙ্গে নিয়ে যায়। যার ফলে জমির ফসল ও ঘেরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্লাবিত হয়ে পড়ে খুলনার দাকোপ ও কয়রা ইউনিয়ন এবং সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার 13 টি ইউনিয়নের মোট 76 কিলোমিটার নদীবাধ ভেঙ্গে যায় এবং 362 কিলোমিটার নদীর বাধ অল্পমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অনেক গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যায় শিবসা, কপোতাক্ষ ও খোলপাটুয়া নদী। দুই লক্ষাধিকেরও বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়। আনুমানিক 73,000 মানুষ কর্মসংস্থান হারায়। জলমগ্ন এলাকায় বিশুদ্ধ জলের অভাব দেখা দেয়। বন্যার কারনে 500 গরু ও 1500 ছাগল মারা যায় এবং নিখোজ হয় অগনিত। তিন লক্ষাধিক মানুষজন ব্যস্তচ্যুত হয়। বন্যা পরবর্তী অবস্থায় কৃষিজাত বিঘ্নিত হওয়ায় আট লক্ষ টন খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এতো বছর পেরিয়ে গেলেও আইলার রেশ এখনও কাটেনি। পুকুরে মিষ্টিজলের বদলে লোনাজল। যার ফলস্বরূপ জলসংকট এখন সেখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। জমির ফসল উৎপাদন কমেছে অনেকগুন। আগে যেসব জমিতে বছরে তিনবার চাষ হতো এখন সেখানে একবার চাষ হচ্ছে।

সবমিলিয়ে আইলা বাংলাদেশ ও ভারতের 325 জন মানুষের জীবনহানি ঘটায় এবং নিখোজ হয় 8000 মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি হয় 552.6 মিলিয়ন ডলার।