Wednesday, April 24, 2024
সম্পাদকীয়

সিগারেটের ইতিহাস

বর্তমান সময়ে কিশোর থেকে শুরু করে তরুন, যুবক, বৃদ্ধ এমনকি মহিলারাও সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। সিগারেটের পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি থাকলেও এটি যে সাস্থ্যের ভীষন ক্ষতি করে সেটি আজ পরীক্ষিত প্রমানিত ও সবর্জনস্বীকৃত। তবে ক্ষতিকর দিক থাকলেও এখনকার দিনে এটিকে অনেকেই স্মার্ট হওয়া এবং কষ্টকে দূর করার প্রধান উপকরন মনে করেন। অনেকটাই ফ্যাশন শো এর মতো।

সিগারেট কিভাবে আসলো তার পিছনে মজার মজার অনেক গল্পও আছে।

প্রায় ৮০০০ বছর আগে পৃথিবীতে তামাকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে ৬০০০ বছর আগে মধ্য আমেরিকায় তামাকের চাষাবাদ শুধু হয়। এটিকে প্রথম দিকে ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হতো। খীষ্টপূর্ব ১০০০ শতাব্দির দিকে মায়ান সভ্যতার মানুষজন ধূমপান এবং তামাক পাতা চিবানো শুরু করে। মায়াম উপজাতির মানুষেরা তামাকের সঙ্গে আরও অনেক ভেষজ গাছ-গাছড়া মিশিয়ে অসুস্থ ও আহতের সেবা করতো। প্রাচীন গুহাচিত্র দেখে বোঝা যায় মায়ান পুরোহিতরা ধূমপান করতো। মায়ান সম্প্রদায়ের লোকজন বিশ্বাস করতো ধূমপানের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। আস্তে আস্তে মায়ানরা সমগ্র আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে তাদের মাধ্যমেই তামাক গাছ সমগ্র আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে।

ইউরোপিয়ানদের মধ্যে সর্বপ্রথম তামাক গাছ আবিষ্কার করেন বিখ্যাত নাবিক ও আবিষ্কারক কলম্বাস। ১৪৪২ সালে তিনি যখন সান সালভাদরে গিয়ে পৌছান তখন সেখানকার লোকজন তাকে দেখে মনে করেন ঈশ্বর প্রেরিত স্বর্গীয় জীব। তারা তাকে খুশি করতে কাঠের তৈরী অস্ত্র, ফলমূল ও শুকনো তামাক উপহার দেন। কলম্বাস অন্য সবকিছু গ্রহন করলেও তামাক পাতাগুলো ফেলে দেন। ঠিক ওই বছরই বড়রিগো ডি যেরেয ( Rodrigo De Jerez) কিউবায় আসেন এবং ইউরোপিয়ানদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ধূমপান করেন। তিনি ছিলেন স্পানিশ। ধূমপান করে তিনি সবাইকে চমকে দেন। একজন মানুষের নাক ও মুখ দিয়ে ধোয়া বের হওয়া দেখে মানুষজন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতেন। তাকে ধূমপানরত অবস্থায় অনেকেই দেখে মনে করেন তাকে ভূতে ধরেছে ! সেজন্যে তাকে সাত বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। জেলে অবশ্য তিনি বন্ধীদের সঙ্গে ধূমপান চালিয়ে যান। দিনে দিনে তামাকের চাহিদা বাড়তে থাকে। এভাবেই একসময় তৈরী হয় সিগারেট।

১৮১৫ সালের দিকে সিগারেট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ” The House Of Parliament” এ সিগারেট খাওয়ার সুবিধার্থে আলাদা রুমের বন্দোবস্ত করা হয়। তবে, ১৮২৮ সালের দিকে বিজ্ঞানিরা নিকোটিন আবিষ্কার করেন। যার ফলে সকলে বুঝতে পারে এটি একটি মারাত্মক বিষ। প্রসঙ্গতো উল্লেখ্য যে, ১৮৫২ সালের দিকে সিগারেট জ্বালানোর সুবিধার জন্যে দিয়াশলাই তেরী হয়।

১৯৫০ সালের দিকে সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সর্বপ্রথম প্রচরনা শুরু হয়। তখনকার গবেষনায় ধরা পড়ে কান্সর আক্রান্ত ৯৫% মানুষই ২৫ বছরের অধিক সময় ধরে ধূমপানে আসক্ত। ১৯৮০ সালের দিকে সিগারেট সম্পর্কে মানুষের দৃর্ষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে এবং এটির দামও হু হু করে বাড়তে থাকে।

১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ দ্বীপ গার্নসে সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়।

২০০৩ সালে প্যাকেটের গায়ে বড় করে সতর্ককরন লেখা যেমন- Smoking Cause Cancer, Smoking Kills, Smoking Highly Injurious To Health, Smoking Harmful To Health লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়।

২০০৪ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রকাশ্যে ও কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে ফিলিপাইনে প্রকাশ্যে ধূমপানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

ধীরে ধীরে বিশ্বের সব দেশে ধূমপান বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। তবে সবচেয়ে কষ্টের কথা হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ভারতবর্ষেও এটির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। যদিও বিভন্ন আইন রয়েছে তবে সেগুলো কাগজ কলমেই মধ্যেই সীমাবদ্ধ অথবা আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব রয়েছে। এটি রিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে এটির কোন উপকার নেই শুধু ক্ষতি ছাড়া। ধূমপান শুধুমাএ সাস্থ্যের ক্ষতি করেনা, ধূমপান অকাল মৃত্যু জন্যেও দায়ী। তাই সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাচতে ধূমপান ত্যাগ করুন।

তথ্যসূএ:- উইকিপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *