Saturday, April 20, 2024
Latestসম্পাদকীয়

এ পি জে আবদুল কালামের কয়েকটি উক্তি

মিসাইল ম্যান নামে খ্যাত ভারতের সাবেক ১১তম রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম। ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ নামে পরিচিত এ পি জে আবদুল কালাম ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ভারতের প্রায় সবকটি বেসামরিক সম্মাননা পেয়েছেন। পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ‘ভারতরত্ন’ সম্মাননা পেয়েছেন।

২০১৫ সালের ২৭শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘বসবাসযোগ্য পৃথিবী’ বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় সন্ধ্যা ৬:৩০ নাগাদ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বক্তৃতা দিতে দিতেই মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে স্থানীয় বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ৭:৪৫ নাগাদ তাঁর মৃত্যু ঘটে।

কালামের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগের ছবি

আবদুল কালাম অগ্নি, পৃথ্বী, আকাশ, ত্রিশুল ও নাগ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তৈরি করেন যা ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক থেকে আমাদের ভারতবর্ষকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করে।

মিসাইল ম্যান আবদুল কালাম তার ৮৪ বছরের জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য মহামূল্যবান বানী। তার থেকে বাছাইকৃত অনুপ্রেরণামূলক কয়েকটি উক্তি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো :

০১. স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।

০২. যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা করো, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট করতে হবে।

০৩. সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে প্রথমে তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে হবে।

০৪. সমস্যাকে কখনো এড়িয়ে যেতে চাইবে না। বরং সমস্যা এলে তার মুখোমুখি দাঁড়াবে। মনে রাখবে, সমস্যাবিহীন সাফল্যে কোনো আনন্দ নেই। সব সমস্যার সমাধান আছে।

০৫. জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসেবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধুমাত্র তুমি সেখানে জয়ী হতে পারবে।

০৬. প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা ব্যক্তিগতভাবে।

০৭. একটি ভাল বই একশত ভাল বন্ধুর সমান কিন্তু একজন ভাল বন্ধু একটি লাইব্রেরীর সমান।

০৮. জাতির সবচেয়ে ভাল মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।

০৯. জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে। সমস্যা আছে বলেই সাফল্যের এতো স্বাদ।

১০. আমরা প্রত্যেকেই ভেতরে ঐশ্বরিক আগুন নিয়ে জন্মায়। আমাদের চেষ্টা করা উচিত এই আগুনে ডানা যুক্ত করার এবং এর মঙ্গলময়তার আলোয় জগত পূর্ণ করা।

ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি

১১. একটি ভাল বই একশত ভাল বন্ধুর সমান কিন্তু একজন ভাল বন্ধু একটি লাইব্রেরীর সমান।

১২. জীবন এবং সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ট শিক্ষক। জীবন শিখায় সময়কে ভালভাবে ব্যবহার করতে সময় শিখায় জীবনের মূল্য দিতে।

১৩. প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা ব্যক্তিগতভাবে।

১৪. সফলতার গল্প পড়ো না কারন তা থেকে তুমি শুধু বার্তা পাবে। ব্যার্থতার গল্প পড় তাহলে সফল হওয়ার কিছু ধারনা পাবে।

১৫. সমস্যাকে কখনো আমার ওপর চেপে বসতে দেব না। যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, কখনোই হাল ছেড়ে দেব না।

১৬. উৎকর্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।’

১৭. আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পুরো মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ। যারা স্বপ্ন দেখে এবং কাজ করে শুধুমাত্র তাদেরকেই শ্রেষ্ঠটা দেওয়ার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত এই বিশ্ব।

১৮. দ্রুত কিন্তু কৃত্রিম আনন্দের পেছনে না ছুটে বরং নিখাদ সাফল্য অর্জনের জন্য আরও বেশি নিবেদিত প্রাণ হও।

আবদুল কালাম ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

১৯. তুমি তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারবে না কিন্তু তোমার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারবে এবং তোমার অভ্যাসই নিশ্চিত ভাবে তোমার ভবিষ্যত পরিবর্তন করবে।

২০. তোমার কাজকে ভালবাস কিন্তু তোমার কোম্পানিকে ভালবাসো না। কারন তুমি হয়ত জান না কখন কোম্পানিটি তোমাকে ভালবাসবে না।

২১. যারা মন থেকে কাজ করে না, তাঁরা আসলে কিছুই অর্জন করতে পারে না। আর করলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।

২২. একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশী শিখতে পারে।

২৩. আমি আবিষ্কার করলাম সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেশী বিক্রি হয়ে যায় সিগারেট ও বিড়ি। অবাক হয়ে ভাবতাম, গরিব মানুষেরা তাদের কঠোর পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ এভাবে ধোঁয়া গিলে উড়িয়ে দেয় কেন।

২৪. ‘যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।’

২৫. একজন উদ্যমী ও একজন বিভ্রান্ত মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, তাদের অভিজ্ঞতাকে তাদের মন যেভাবে ব্যবহার করে তার মধ্যে পার্থক্য।

আবদুল কালাম

২৬. বিজয়ী হওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে বিজয়ী হওয়ার দরকার নেই মনে করা। তুমি যখন স্বাভাবিক আর সন্দেহমুক্ত থাকবে, তখনই তুমি ভালো ফলাফল করতে পারবে।

২৭. আমি জানতাম সামনের দিনগুলো আরও সংকটময় হবে। প্রশ্ন ছিল যার উত্তর দিতে হবে এবং কর্মপরিকল্পনা যা প্রস্তুত করতে হবে।

২৮. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে। আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে। যেপথে কেউ যায় নি, সে পথে চলতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহৎ গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।

২৯. যদি আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি সমৃদ্ধ ও নিরাপদ ভারত দিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা স্মরণীয় হতে পারবো।

৩০. যে অন্যদের জানে সে শিক্ষিত, কিন্তু জ্ঞানী হল সেই ব্যক্তি যে নিজেকে জানে। জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা কোন কাজে আসেনা।

৩১. শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।

৩২. সফলতার গল্পে কেবল একটি বার্তা থাকে। কিন্তু ব্যর্থতার গল্পে সফল হওয়ার উপায় থাকে।

৩৩. আমি ভাবি, কেন কিছু মানুষ মনে করে বিজ্ঞান মানুষকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় খোদার কাছ থেকে ? আমি এটাকে যেভাবে দেখি তাহলো, বিজ্ঞানের পথ সর্বদা হৃদয়ের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আমার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান হচ্ছে আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি ও আত্ম-উপলব্ধির পথ।

৩৪. ‘‘আমি সুদর্শন নই। কিন্তু আমি আমার হাত তার জন্য বাড়িয়ে দিতে পারি যার সাহায্য প্রয়োজন। সৌন্দর্য হৃদয়ে, মুখে নয়।

৩৫. আমি কখনো সন্দেহ করিনি যে আমাদের মসজিদের প্রার্থনা যেখানে পৌঁছায়, সেই একই গন্তব্যে পৌঁছায় মন্দিরের প্রার্থনাও।

৩৬. ‘‘বৃষ্টির সময় প্রত্যেকটি পাখিই কোথাও না কোথাও আশ্রয় পায়। কিন্তু ঈগল মেঘের উপর দিয়ে উড়ে বৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়।

৩৭. বিজ্ঞান আমাদের মানবজাতির জন্যে একটি সুন্দর উপহার, আমাদের উচিত সেটিকে বিকৃত না করা।

৩৮. তরুণেরা চাকুরী হননকারী না হয়ে বরং চাকুরী প্রদানকারীতে পরিণত হয়ে উঠো।

প্রজাতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে

৩৯. চলো আমরা আমাদের আজকের দিনটিকে উৎসর্গ করি যাতে করে আমাদের সন্তানেরা একটি সুন্দর আগামী পায়।

৪০. আমার মতে এই পৃথিবীতে দু’ধরণের লোক রয়েছে; এক হলো তরুণ আর এক হলো অভিজ্ঞ।

৪১. তোমার মিশনকে সফল করে তুলতে তোমাকে এক মনে নিষ্ঠার সাথে লক্ষ্যর উদ্দেশ্যে এগুতে হবে।

৪২. তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তোমাকে আগে স্বপ্ন দেখতে হবে।

৪৩. প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো :
* আমি সেরা।
*  আমি করতে পারি।
*  সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে।
*  আমি জয়ী।
*  আজ দিনটা আমার।

৪৪. জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মূলত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমি আলোকপাত করি। সেগুলো হলো: জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, জ্ঞান আহরণ, অনেক বড় সমস্যায় পড়লেও লক্ষ্য থেকে সরে না আসা এবং কোনো কাজে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোকেই নেতৃত্বগুণে সামাল দিতে পারা।

৪৫. হতাশ না হয়ে নিজেকে স্বপ্নপূরণের কতটা কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারছ, সেদিকে নজর রাখবে। কখনোই সাহস হারাবে না। নিজের একটি দিনও যাতে বৃথা মনে না হয়, সে চেষ্টা করো।

৪৬. কাউকে হারিয়ে দেয়াটা খুব সহজ, কিন্তু কঠিন হলো কারো মন জয়।

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি

৪৭. আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রম ব্যর্থতা নামক রোগকে মারার সবচেয়ে বড় ওষুধ। এটাই আপনাকে একজন সফলকাম মানুষে পরিণত করবে।

৪৮. নেতা সমস্যায় ভয় পাবেন না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাঁকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।

৪৯. প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সম্মতি দেওয়া। আমি মনে করি পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে মানুষ অপরাধ করে। অপরাধের জন্য দায়ী সমাজ বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। শাস্তি দিই ব্যবস্থার শিকার মানুষদের।

৫০. স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।

৫১. কেবল বিশেষ সময়ে নয় সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।

৫২. শ্রেষ্ঠত্ব একটি অবিরাম প্রক্রিয়া। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়।

৫৩. প্রথম বিজয়ের পর বসে থাকবেন না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন আপনি ব্যর্থ হবেন তখন অনেকেই বলবেন প্রথমটিতে শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলেন তিনি।

৫৪. ছাত্রদের মাঝে অনুসন্ধান, সৃজনশীলতা, উদ্যোক্তা এবং নৈতিক নেতৃত্বের সক্ষমতা তৈরি করা উচিত শিক্ষাবিদদের।

৫৫. আমি ভাবি, কেন কিছু মানুষ মনে করে বিজ্ঞান মানুষকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় খোদার কাছ থেকে ? আমি এটাকে যেভাবে দেখি তাহলো, বিজ্ঞানের পথ সর্বদা হৃদয়ের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আমার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান হচ্ছে আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি ও আত্ম-উপলব্ধির পথ।

৫৬. জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মূলত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমি লক্ষ্য করি :
* জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ
* জ্ঞান আহরণ
* অনেক বড় সমস্যায় পড়লেও লক্ষ্য থেকে সরে না আসা
* কোনো কাজে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোকেই নেতৃত্বগুণে সামাল দিতে পারা।

৫৭. আমরা তখনই স্মরণীয় হয়ে থাকবো, শুধুমাত্র যখন আমরা আমাদের উত্তর প্রজন্মকে উন্নত ও নিরাপদ ভারত উপহার দিতে পারবো।