Friday, April 19, 2024
দেশ

মাতৃগর্ভেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কন্যাশিশুর ভ্রূণ

হায়দরাবাদ: পুরোপুরি পরিণত হওয়ার আগেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে শিশুর দাম। শিশুপিছু তা কখনও ১৫ হাজার রুপি, কখনও বা ৮০ হাজার। জন্মের আগে এভাবেই হাজার হাজার রুপিতে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কন্যাশিশুর ভ্রূণ।

হায়দরাবাদে সম্প্রতি চালানো একটি স্টিং অপারেশনে সামনে আসে  চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। খোঁজ মেলে একটি বড় শিশুপাচার চক্রের। পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের শিশুপাচার চক্রের হদিস মেলে আগেই।

ওই স্টিং অপারেশনের কল্যাণে শিশুপাচার চক্রের ৬ সদস্যকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও।

এনডিটিভির দাবি, হায়দরাবাদের এই শিশুপাচার চক্রের খবর আগে থেকেই তাদের কাছে ছিল। স্টিং অপারেশনের জন্য তারা হায়দরাবাদে একটি অস্থায়ী কার্যালয়ও খুলে ফেলে। শিশুপাচার চক্রের এক সদস্যকে শিশু কেনার কথা জানিয়ে খবর দেওয়া হলে রবি নামে একজন টিভি চ্যানেলের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিয়ে আসেন এক অন্তঃসত্ত্বাকে। ওই নারীকে তার ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে রবি জানায়, তার গর্ভে কন্যাশিশুর ভ্রূণ রয়েছে। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা করে চিকিৎসক সে কথাই জানিয়েছেন।

এরপর শিশুটির জন্মের আগেই ঠিক করা তার দাম। শিশুটির জন্য ৮০ হাজার রুপি দাবি করে রবি। সে জানায়, এই ৮০ হাজার রুপির মধ্যে ৩০ হাজার রুপি নিজের জন্য রেখে বাকি ৫০ হাজার রুপি হাসপাতালের নার্সকে দেবে।

গত শুক্রবার কন্যাভ্রূণ বিক্রির জন্য হায়দরাবাদের একটি মন্দিরে টিভি চ্যানেলের ‘ক্রেতা’ সাংবাদিককে ডেকে পাঠায় রবি (শিশু পাচারকারী)। ঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছে যান ‘ক্রেতা’ সাংবাদিক। সঙ্গে ছিল পুলিশ। তবে পুলিশ সাদা পোশাকে লুকিয়ে ছিলেন। কিছু ক্ষণ পর এক মহিলা সদ্যোজাতকে নিয়ে হাজির হন। আর তখনই তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে রবিসহ ৫ শিশু পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

খবর নিয়ে জানা যায়, হায়দরাবাদ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কালওয়াকুর্তি হাসপাতালের সঙ্গে একটা ‘বোঝাপড়া’ আছে রবির। সে অনুযায়ী ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ থেকে শিশুর জন্ম, সবটাই করানো হয় ওই হাসপাতালে। তাই যারা ‘ক্রেতা’ সেজে রবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, বিশ্বাস অর্জন করতে সেই সাংবাদিককেও কালওয়াকুর্তি হাসপাতালে নিয়ে যায় রবি। ৫০ হাজার রুপি যে নার্সের জন্য চেয়েছিল রবি, তার সঙ্গে আলাপও় করিয়ে দেয়। শিশু জন্মানোর পর সেই নার্সই শিশুটির ‘ডেথ’ সার্টিফিকেট দেন। হাসপাতালের খাতায় শিশুটির নামের পাশে ‘মৃত’ লিখে দেন নার্স। তার পর শিশুটির মা আর তার পরিবারের কাছে শিশুকে ‘মৃত’ প্রমাণ করতে শিশুটিকে তড়িঘড়ি কবর দেওয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করে রবি। গর্ত খুঁড়ে ফেলে। তার পর সকলের নজরের আড়ালে সেই গর্তের ওপর পাথর চাপা দিয়ে দেয় রবি। তারপর আরেক দফা নাটক! ‘শিশুটি মারা গেছে’ বলে চোখের জল ফেলে রবি। এরপর শিশুটিকে নিয়ে ‘ক্রেতা’র হাতে তুলে দেয় সে।

পশ্চিমবঙ্গেও বড়সড় শিশুপাচার চক্র অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। কলকাতার খুব কাছে বাদুড়িয়ায় গত বছরের শেষাশেষি এমন একটি বড়সড় শিশু পাচারচক্রের হদিশ পান তদন্তকারীরা। বিস্কুটের বাক্সের মধ্যে থেকে তিন নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। এটাও জানা যায়, বাদুড়িয়া ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগণার একাধিক নার্সিংহোমে রমরমিয়ে চলছে এই শিশুপাচার চক্রের কাজকর্ম। রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের আরও কয়েকটি জেলা ও শহরেও এই চক্রগুলি সক্রিয়। এনডিটিভি