স্ত্রীকে ভ্যানে চাপিয়ে কুম্ভের পথে কৃষ্ণনগরের বাঁকাচাঁদ
কলকাতা ট্রিবিউন ডেস্ক: প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় যখন লাখো পুণ্যার্থী ভিড় জমিয়েছেন, তখন এক ব্যতিক্রমী যাত্রার সাক্ষী থাকল কৃষ্ণনগর। স্ত্রীকে ভ্যানে চাপিয়ে, পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে কুম্ভের পথে রওনা দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের দুলাল বিশ্বাস, যিনি এলাকায় বাঁকাচাঁদ নামেই বেশি পরিচিত।
পরিবেশ সচেতনতায় অনন্য যাত্রা
কৃষ্ণনগরে একসময় দর্জির কাজ করা বাঁকাচাঁদ শুধু পুণ্যলাভের উদ্দেশ্যে রওনা হননি, বরং তার এই যাত্রার মূল উদ্দেশ্য পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। তার ভ্যানের চারদিকে লেখা— “নদী বাঁচাও, মাটি ও জল বাঁচাও, দূষণকর প্লাস্টিক বর্জন কর, বাইসাইকেল চালাও।” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ জলঙ্গি’ তার রিকশায় এসব বার্তা সংযোজন করেছে এবং সেই সঙ্গে দেওয়া হয়েছে পরিবেশ রক্ষার বার্তা সম্বলিত অডিও ক্লিপ, যা রাস্তায় চলার সময় বাজবে।
বাঁকাচাঁদের ঘর ছাড়ার গল্প
প্রায় ১২ বছর আগে বন্ধুদের সহায়তায় বাঁকাচাঁদের জন্য এই বিশেষ ভ্যানরিকশা তৈরি হয়েছিল, যেখানে গ্রিল দিয়ে ঘেরা একটি বক্সসেট রয়েছে। এক বন্ধু সেখানে মিউজিক বক্সও লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ভ্যানেই স্ত্রী স্বর্ণলতাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এর আগে গঙ্গাসাগর, কামরূপ-কামাখ্যা সফর করেছেন। তখন আড়াই মাসে দেড় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে খরচ হয়েছিল মাত্র ২ হাজার টাকা। এবারও তেমনই সামান্য টাকাপয়সা সঙ্গে নিয়ে কুম্ভের পথে পাড়ি দিয়েছেন বাঁকাচাঁদ, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন— “দেশে এখনও অনেক ভালো মানুষ আছেন, যারা পথে বন্ধু হয়ে দাঁড়ান।”
কুম্ভমেলার বৈচিত্র্যময় দৃশ্যপট
প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় নানা রঙের ছবি ধরা পড়েছে। সাধু-সন্তদের আখড়ায় ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসীদের ভিড়, দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থীদের ঢল, কেউ আবার অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতে শাহি স্নানের জন্য হাজির হয়েছেন। ‘অক্সিজেন বাবা’ নামে পরিচিত এক ভক্ত, যিনি করোনা-উত্তর শারীরিক দুর্বলতা ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও মনের জোরে হরিয়ানার ঝুসি আখড়ায় পৌঁছে গেছেন। চিকিৎসকদের নিষেধ সত্ত্বেও তিনি এখানে এসেছেন পুণ্যস্নান করতে।
এবার কুম্ভমেলায় আরও এক চমকপ্রদ চরিত্র হাজির হয়েছেন— ‘মাসকিউলার বাবা’। সুদূর রাশিয়া থেকে আসা এই ব্যক্তির উচ্চতা ৭ ফুট, পেশিবহুল শরীর, পরনে গেরুয়া বসন, কপালে লাল সিঁদুর এবং গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। তার রহস্যময় উপস্থিতি পুণ্যার্থীদের মধ্যে কৌতূহল বাড়িয়ে তুলেছে।
বাঁকাচাঁদের যাত্রার তাৎপর্য
বাঁকাচাঁদের এই যাত্রা নিছক কুম্ভমেলায় যোগ দেওয়ার জন্য নয়; বরং এটি এক সামাজিক আন্দোলনের অংশ। নদী ও প্রকৃতি বাঁচানোর বার্তা ছড়িয়ে দিতে তার এই প্রচেষ্টা অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। কৃষ্ণনগরের এই ‘পরিবেশ দূত’-এর যাত্রা হয়তো অনেককেই অনুপ্রাণিত করবে প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে।