পাকিস্তান ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ
ইসলামাবাদ: গত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে শতাব্দী-প্রাচীন একটি হিন্দু মন্দির ভেঙে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে এক দল উচ্ছৃঙ্খল মুসলিমরা। তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও পাকিস্তানে একাধিক মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সম্প্রতি টেরি গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে মন্দির ভেঙে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশটির সংখ্যালঘু হিন্দু সমাজের মধ্যে নতুন করে ভয়ভীতি তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ তারা। পাকিস্তানে মোটামুটি সবাই মুসলিম। দেশটির মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশেরও কম হিন্দু জনগোষ্ঠী। হিন্দুদের বিরুদ্ধে সমাজের ধারণাও প্রায় বদ্ধমূল।
এর আগে ১৯৯৭ সালে এই শ্রী পরম হংসজি মহারাজ সমাধি মন্দিরে প্রথম হামলা চালানো চালায় মৌলবাদীরা। ঘটনার ১৮ বছর পর ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয় মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য। তবে এখনও মন্দিরটি পুননির্মাণের কাজ শেষ হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর স্থানীয় হিন্দুরা মন্দিরটির পাশের আরেকটি বাড়ি কিনে সেটি মেরামতের কাজ শুরু করে। বাড়িটি কেনা হয়েছিল হিন্দু পুণ্যার্থীদের বিশ্রামের জায়গা তৈরি করতে। এর ফলে স্থানীয় মুসলিমরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা মনে করে যে মন্দিরটি সম্প্রসারনের কাজ চলছে।
৩০শে ডিসেম্বর মন্দিরের কাছে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন মৌলবাদীরা। স্থানীয় একজন ধর্মীয় নেতা মৌলভী মহম্মদ শরীফ এই সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। এর আগে ১৯৯৭ সালের হামলাতেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই ধর্মীয় নেতা এবারও সমাবেশে আগত লোকজনকে উস্কানি দিয়ে তাদেরকে উত্তেজিত করে তোলেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত মুসলিমরা হাতুড়ি দিয়ে মন্দিরের দেওয়াল ভেঙে ফেলে, মন্দিরের ভিতরে থাকা দেব-দেবীর মূর্তি রাস্তায় ফেলে দেয় এবং পরে মন্দিরটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সমাবেশ চলাকালীন আপত্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে মন্দিরে পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা উত্তেজিত জনতাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।
হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মৌলভী মহম্মদ শরীফও রয়েছেন। একই সাথে হামলার সময় দায়িত্বরত দুজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা-সহ পুলিশের ৯২ জন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, হামলার সময় সেখানে ৯২ জন পুলিশ অফিসার উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা নিশ্চুপ-নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিলেন।


