কিভাবে বুঝবেন আপনার বন্ধু/বান্ধবী ডিপ্রেশনে ভুগছে কিনা?
বিশ্বে আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে বড় সংকট হল বিষণ্ণতা। গবেষক ও চিকিৎসকরা মনে করে সাধারণভাবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় কখনও না কখনও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা হতে পারেন।
কিভাবে বুঝবেন আপনার বন্ধু/বান্ধবী ডিপ্রেশনে ভুগছে কিনা?
ডিপ্রেশনে নিমজ্জিত মানুষ দেখতে অনেকটা এরকম-

অথবা এরকম-

দুটো ছবির মধ্যে প্রথম জন মীরাক্কেলের মীর আফসার আলী। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি একসাথে ৮৭টি ঘুমের বড়ি খেয়ে সেই যাত্রায় কোনমতে বেঁচে ফিরেন। তিনি চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বারবারই মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন পরিবার ও বন্ধুদের সহযোগিতায়।
আর দ্বিতীয়জন হচ্ছেন চেস্টার বেনিংটন, বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড ‘লিংকিন পার্ক’ এর লিড ভোকালিস্ট। ইনি অবশ্য মীরের মতো অতটা ভাগ্যবান নন। ২০১৭ সালের কোন একদিনে নিজগৃহে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ডিপ্রেশনের কোন রঙ,গন্ধ, বর্ণ, জাত-ধর্ম হয়না আসলে। এতে ভুগতে থাকা মানুষটা দেখতে সবসময় যে মনমরা, মলিন বদনমুখো হবেন বা প্রচন্ড অর্থাভাবে ভুগতে থাকবেন — এমনটা নাও হতে পারে। হতে পারে আপনার বন্ধুদের মধ্যে আড্ডা মাতিয়ে রাখা সদা হাস্যোজ্জ্বল যে বন্ধুটি, সেই বন্ধুটিকেই ভেতর ভেতর ডিপ্রেশনের ঘুনপোকা নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
হতাশাগ্রস্থ মানুষের তিনটে বড় লক্ষণ আছে-
- আলোক সংবেদনশীলতা: অতিমাত্রায় ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা মানুষ অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। ভর দিনদুপুরেও তারা দরজা-জানলা-লাইট বন্ধ করে রুম অন্ধকার করে রাখে। পরিচিত-অপরিচিত সব ধরণের মানুষের সাহচার্য এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। একজন মানুষ যখন হতাশার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে,তখনই এমন আচরণ বেশী দেখা যায়।
- অনাগ্রহঃ হতাশাগ্রস্ত একজন মানুষ ঝড়ের কবলে পড়ে মাঝ সমুদ্রে হাল ছেড়ে দেয়া নাবিকের মতো। তার আচরণে রাজ্যের নির্লিপ্ততা প্রকাশ পায়। যেন কোন কিছুতেই কোন আগ্রহ, কৌতূহল নেই।
- আত্মবিশ্বাসহীনতাঃ হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস একদম তলানিতে গিয়ে ঠেকে। একটা সহজ কাজ করাও খুব দুরূহ ঠেকে।
এছাড়াও আরও কিছু উপসর্গ হচ্ছে,
- দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকা
- যেসব কাজে আনন্দ পেতো সেসব কাজে আনন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া
- ঘুম অস্বাভাবিক কম বা বাড়তে পারে
- খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া
- ওজন কমে যাওয়া
- কাজে ও চিন্তায় ধীরগতি হয়ে যাওয়া
- নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে দায়ী মনে হওয়া সবকিছুতে
- সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া এবং খুব তীব্র হলে আত্মহত্যার চিন্তা পরিকল্পনা ও চেষ্টা করে
যে কোনও বয়সেই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাপ্ত বয়স্কদেরই বেশি দেখা দেয়। তবে যে কোনও বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারেন পারিপার্শ্বিক নানা কারণে।
বিষণ্ণতা কাটানোর উপায়-
বিষণ্ণতা তিন ধরণের হয়- মৃদু, অল্প বা বেশি। মৃদু বিষণ্ণতা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। আবার অল্প হলে কারও সাথে শেয়ার করা বা সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বাড়ালে কাজে লাগে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন না থাকা। সবার সঙ্গে মেশা। যাদের সঙ্গ ভালো লাগে তাদের কাছে থাকা। মানুষের কাছ থেকে দুরে সরে না যাওয়ার মাধ্যমেও কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বিষণ্ণতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল- নিজেকে গুটিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। এজন্য আমরা বলি শারীরিক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা করা। রেগুলার ৩০ মিনিট হাঁটা খুবই ভালো। কেউ বাইরে যেতে না পারলে ঘরের মধ্যেই ঘোরাফেরা করতে পারে তাতেও উপকার পাবে।
একজন মানুষ যতোটা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকবে ততটাই তার সমস্যা কাটবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকভাবে দৃঢ় থাক ও আত্মবিশ্বাস রাখা যে আমি পারবো। এজন্য নিজের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে ফোকাস করা যেতে পারে এবং ভালো কাজগুলোর চর্চা করা।
তবে দৈনন্দিন জীবন যাপনের কাজ কিংবা পড়ালেখা বা পরিবারের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতেই থাকলে বা কেউ যদি ক্রমাগত নিজে গুটিয়ে নিচ্ছে মনে হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
বিষণ্ণতা অনেকটাই নিরাময়যোগ্য তাই একে অবহেলা করা উচিত নয়। বিষণ্ণতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী জীবনাচরণ পরিচালনা করতে পারলে এ থেকে সহজেই উত্তরণ করা সম্ভব।


